রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় বৃহস্পতিবার (১৫ মে) বিকেল পর্যন্ত টানা প্রায় ৩০ ঘণ্টা ধরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিতে শুরু হওয়া এই অবরোধ কর্মসূচিতে থমকে যায় নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। ফলে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো যাত্রী।
বুধবার (১৪ মে) দুপুর ১টা থেকে শুরু হয় এই অবরোধ। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় কাকরাইল মসজিদের মোড় থেকে মৎস্য ভবন পর্যন্ত সড়কে অবস্থান নেন বিক্ষোভকারীরা। আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দাবি মানা না হলে তাঁরা রাস্তা ছাড়বেন না। এই সময়ের মধ্যে আশপাশের শাহবাগ, পল্টন, গুলিস্তান, মালিবাগ, বাংলামোটরসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে যানজট তীব্র আকার ধারণ করে।
ট্রাফিক পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, অবরোধের কারণে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অফিসগামীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কেউ কেউ এক স্থানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে বাধ্য হন, আবার কেউ রিকশা ছেড়ে হাঁটতে শুরু করেন।
যানজটে আটকে থাকা জেসমিন আরা বলেন, “প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে কাকরাইলে দাঁড়িয়ে আছি, হাসপাতালের দিকে যাচ্ছি। ভাই ভর্তি, কিন্তু গাড়ি একচুলও নড়ছে না।”
একইভাবে জান্নাতুল নাইম নামের এক শিক্ষার্থী জানান, “বন্ধু অ্যাকসিডেন্ট করেছে। এখন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি। আমি হাঁটা শুরু করেছি, কারণ গাড়িতে বসে থাকার আর উপায় নেই।”
অন্যদিকে, প্রেসক্লাব থেকে রিকশায় মগবাজারে যাওয়ার চেষ্টা করা আসাদুল ইসলাম বলেন, “যানজট দেখে রিকশা থেকে নেমে হাঁটছি। সময়মতো পৌঁছানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।”
বিক্ষোভ চলাকালীন রাজধানীতে ছেঁটাফোঁটা বৃষ্টির কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। রাস্তায় পানি জমে যানজট দীর্ঘতর হয়। ভেতরের গলিতেও বিকল্প যান চলাচলের ফলে চাপ বেড়ে যায়।
ট্রাফিক বিভাগের রমনা অঞ্চলের উপকমিশনার (ডিসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, “সড়ক অবরোধের কারণে বিকল্প সড়কে গাড়ির চাপ বেড়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমরা কাজ করছি।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, তাঁদের চার দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে। দাবিগুলো হলো:
১. ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য আবাসন বৃত্তি চালু করা।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন দেওয়া।
৩. দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাশ ও দ্রুত বাস্তবায়ন।
৪. ১৪ মে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের অতর্কিত হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা।
বুধবার (১৪ মে) সকাল ১১টার দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা লংমার্চ শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে। দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে কাকরাইলে পৌঁছালে পুলিশ তাদের ওপর কাঁদানে গ্যাস, গরম পানি এবং সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পরে লাঠিপেটা করে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও সাংবাদিকসহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
এর প্রতিবাদে বিকাল ২টা থেকে কাকরাইলে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। তখন থেকেই চলছে এই টানা অবরোধ কর্মসূচি।
আন্দোলনের অংশ হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন বলেন, “আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। আমরা ক্যাম্পাসে ফিরব না।”