বলিউডের অন্যতম জনপ্রিয় কমেডি ফ্র্যাঞ্চাইজি ‘হেরা ফেরি’ নিয়ে দর্শকের উন্মাদনার শেষ নেই। রাজু, বাবুরাও আর শ্যাম-এই ত্রয়ীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে ছবির জনপ্রিয়তা, যা দুই দশক ধরে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছে। এত বছর পর দর্শকের প্রিয় এই ত্রয়ীকে আবার একসঙ্গে বড় পর্দায় দেখার সম্ভাবনায় যেমন উচ্ছ্বাস ছিল, তেমনি হঠাৎ করেই পরেশ রাওয়ালের সরে দাঁড়ানোর খবরে নেমে এসেছে হতাশা ও বিস্ময়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস ও ইন্ডিয়া টুডে-এর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ‘হেরা ফেরি ৩’-এর শুটিং শুরু হলেও ছবির অন্যতম মুখ্য চরিত্র ‘বাবুরাও’ হিসেবে খ্যাত পরেশ রাওয়াল মাঝপথে সিনেমাটি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এই সিদ্ধান্তের জেরে ক্ষুব্ধ হয়েছেন রাজু চরিত্রে অভিনয় করা অক্ষয় কুমার। অভিনেতা শুধু ক্ষোভ প্রকাশ করেই থেমে থাকেননি, বরং তিনি পরেশ রাওয়ালের বিরুদ্ধে প্রায় ২৫ কোটি রুপির (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা) মানহানির মামলা করার উদ্যোগ নিয়েছেন।
অক্ষয়ের প্রযোজনা সংস্থা ‘কেপ অব গুড ফিল্মস’-এর পক্ষ থেকে পরেশকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ দু’টি-অপেশাদার আচরণ এবং চুক্তি স্বাক্ষরের পর হঠাৎ সিনেমা থেকে সরে দাঁড়ানো।
পরেশ রাওয়ালের এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত শুধু দর্শক নয়, নির্মাতা ও সহ-অভিনেতাদেরও চমকে দিয়েছে। ছবির পরিচালক প্রিয়দর্শন হিন্দুস্তান টাইমস-কে বলেন, “পরেশ আমাকে কিছুই জানাননি। এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ওর একবার আমার সঙ্গে কথা বলা উচিত ছিল।”
অন্যদিকে, ছবির আরেক অভিনেতা সুনীল শেঠি ইন্ডিয়া টুডে-কে বলেন, “প্রথমে ভেবেছিলাম কোনো ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। কিন্তু পরে বুঝলাম, কারও সঙ্গে ওর কোনো কথাই হয়নি। পরেশের ছাড়া আমি ‘হেরা ফেরি’ কল্পনাও করতে পারি না।”
পরেশ অবশ্য দাবি করেছেন, নির্মাতা প্রিয়দর্শনের সঙ্গে তাঁর কোনো মতবিরোধ হয়নি। মিড ডেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, “আমি নিজেকে এ সিনেমার অংশ মনে করতে পারছি না। তাই সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
এই প্রথম নয়, এর আগেও পরেশ রাওয়াল একাধিকবার সিনেমা ছেড়ে দেওয়ার উদাহরণ রেখেছেন। ২০২৩ সালে তিনি ‘ওহ মাই গড ২’ থেকে এবং ২০০৯ সালে শাহরুখ খানের ‘বিল্লু বারবার’ থেকে সরে দাঁড়ান।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি পুরোনো সাক্ষাৎকারে পরেশ বলেন, “অক্ষয় কুমার আমার বন্ধু নন, তিনি একজন সহকর্মী।” এই মন্তব্য ঘিরেও নতুন করে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। যদিও পরেশ পরে ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “বন্ধু বলতে আমরা কেউ কারও সঙ্গে পার্টি করি না বা নিয়মিত দেখা করি না, তাই সহকর্মী বলেছি। তাতে এত প্রশ্ন ওঠার কিছু নেই।”
২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘হেরা ফেরি’ ছিল একটি ব্লকবাস্টার সিনেমা, যেখানে অক্ষয়, পরেশ ও সুনীলের কমেডি ত্রয়ী দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী ছাপ ফেলে। এরপর ২০০৬ সালে আসে ‘ফির হেরা ফেরি’। এবার দুই দশক পর তৃতীয় কিস্তি ‘হেরা ফেরি ৩’-এর শুটিং শুরু হলে আবারও দর্শকের আগ্রহ তুঙ্গে ওঠে।
কিন্তু বাবুরাও ছাড়া এই সিনেমা কতটা জমবে, সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সর্বত্র। নির্মাতা, সহ-অভিনেতা ও দর্শকেরা এখনো আশা ছাড়ছেন না যে, হয়তো শেষ মুহূর্তে পরেশ সিদ্ধান্ত বদল করবেন।
তবে এখন পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে বলা যায় ‘হেরা ফেরি ৩’-এর ভবিষ্যৎ গভীর অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছে। বলিউডের অন্যতম সফল কমেডি সিরিজের পরবর্তী পর্ব আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা, সেটাই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।