সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আদালত অবমাননার অভিযোগ গঠনের পর তাকে আগামী ৩ জুন ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ জারি করা হয়েছে। একটি অডিও বার্তায় দেওয়া মন্তব্যের সূত্র ধরে এ পদক্ষেপ নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। বিষয়টি ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, সোমবার (২৬ মে) দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে—“সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আগামী ৩ জুন (মঙ্গলবার) সকাল ১০টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে স্বশরীরে হাজির হতে হবে।” এর আগে গত ২৫ মে, রোববার, ট্রাইব্যুনাল এই নির্দেশ দেন।
প্রসঙ্গত, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি অডিও বার্তায় এক নারীকে বলতে শোনা যায়, “আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি হত্যা মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি।” এই বক্তব্য নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার পর তদন্তে নামে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
তদন্তকারীরা অডিওটির ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেন, এটি শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর। এরপর বিচারকাজে প্রভাব বিস্তার এবং হুমকি প্রদানের অভিযোগ এনে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়। এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে ট্রাইব্যুনালে একটি আবেদন দাখিল করা হয় গত ৩০ এপ্রিল। বিষয়টি নিশ্চিত করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “ফরেনসিক পরীক্ষায় প্রমাণ হয়েছে, এটি শেখ হাসিনার কণ্ঠ। এতে তিনি ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজ নিয়ে হুমকিমূলক মন্তব্য করেছেন, যা বিচার ব্যবস্থার প্রতি চরম অবমাননা।” তিনি আরও জানান, এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিচারক ও তদন্ত কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা ও নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।
বিচারকাজে হস্তক্ষেপ ও আইনকে অগ্রাহ্য করার প্রবণতা রোধে এই ধরনের মন্তব্যকে গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে ট্রাইব্যুনাল। তাই বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সরাসরি আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে শেখ হাসিনাকে।
এদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন উত্তেজনা তৈরি হতে পারে। বিষয়টি এখন বিচারাধীন হলেও এর প্রভাব জাতীয় রাজনীতিতে দীর্ঘমেয়াদে ছড়িয়ে পড়তে পারে।