বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের দ্বীপ মাতারবাড়ি ও মহেশখালীকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও জ্বালানি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। এই অঞ্চলকে ‘নিউ সিঙ্গাপুর’ রূপে গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণের প্রয়াস নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ লক্ষ্যে তিনি জাপান সফরে যাচ্ছেন—যা দেশের অর্থনীতি ও কৌশলগত ভবিষ্যতের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, মাতারবাড়ি-মহেশখালী উন্নয়ন পরিকল্পনায় প্রায় ১৪০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। এই অর্থায়নের একটি বড় অংশ জাপান থেকে সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। জাপানের কাছে প্রায় ৫০০ থেকে ৭৫০ মিলিয়ন ডলার, সর্বোচ্চ ১ বিলিয়ন ডলারের আর্থিক সহায়তা প্রত্যাশা করা হচ্ছে, যার মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা হিসেবে আসবে।
জাপান সফরের সময় একটি সেমিনারে প্রায় তিনশ জাপানি বিনিয়োগকারী অংশগ্রহণ করবেন। সেখানে আড়াই হাজার জাপানি নাগরিকের জন্য গড়ে তোলা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ বাড়ানোর উপযোগিতা তুলে ধরা হবে। প্রধানমন্ত্রী ইউনূস সেখানে তাদের জন্য আরও কী ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যেতে পারে সে নিয়েও আলোচনা করবেন।
মহেশখালী-মাতারবাড়ি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে ছয়টি বৃহৎ পোর্ট টার্মিনাল, যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজগুলো ভিড়তে পারবে। এই অঞ্চলে গড়ে উঠবে একটি আধুনিক শহর, একাধিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, লজিস্টিক হাব, ম্যানুফ্যাকচারিং জোন এবং এনার্জি হাব। এই মহাপরিকল্পনার মাধ্যমে মাতারবাড়ি হবে দেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্রবন্দর ও জ্বালানিকেন্দ্রিক অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র।
প্রেস সচিব জানান, মালয়েশিয়ার পেট্রোনাস কোম্পানি মাতারবাড়িতে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, যা বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।
মাতারবাড়ির উন্নয়নের ধারায় কক্সবাজারও দ্রুতগতিতে বিকশিত হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রেস সচিব। ইতোমধ্যে কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে রূপান্তরের কাজ চলছে, যা এই অঞ্চলের পর্যটন ও বাণিজ্যকে আরও এগিয়ে নেবে।
একই অনুষ্ঠানে সরকারি চাকরিজীবীদের বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে শফিকুল আলম বলেন, “প্রজাতন্ত্রের কর্মীরা দেশের নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য থাকবেন।” তিনি উল্লেখ করেন, তাদের কোনো দাবি থাকলে তা সচিবদের কমিটির কাছে জানানো যেতে পারে। সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ নিয়ে অসন্তোষ থেকে উদ্ভূত আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আলোচনার মধ্যেই সচিবালয়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে।
এই অধ্যাদেশের আওতায় সরকারি কর্মচারীদের চাকরি নিরাপত্তা ও পদোন্নতির বিধানে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে, যা নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান খোঁজা হচ্ছে।