আমাকে মেয়র ঘোষণা দিয়েই সংশোধন করুন: ইশরাকের হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক
| আপডেট: ২৯ মে, ২০২৫, ০৬:১২ পিএম | প্রকাশ: ২৯ মে, ২০২৫, ০৬:১২ পিএম
আমাকে মেয়র ঘোষণা দিয়েই সংশোধন করুন: ইশরাকের হুঁশিয়ারি

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ঘিরে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও তীব্রতর রূপ নিয়েছে। আদালতের রায়ে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করা হলেও এখনো তাঁকে শপথ পড়ানো হয়নি। দীর্ঘদিনের আইনি লড়াই শেষে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের পর নতুন করে শহরের প্রশাসনিক ভবন হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রস্থল।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) আপিল বিভাগ নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত গেজেট বহাল রেখে ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণার বিরুদ্ধে করা লিভ টু আপিল পর্যবেক্ষণসহ নিষ্পত্তি করে দেয়। এর মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালত নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের রায় এবং ইসির গেজেটকে বৈধতা দেয়। রায়ের পরদিনই সকাল থেকে নগর ভবনে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। তাদের সঙ্গে ছিলেন সিটি করপোরেশনের বেশ কিছু কর্মচারী ও বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের সদস্যরাও।

সকালে নগর ভবনে প্রবেশ করে ইশরাক হোসেন তাঁর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, “এই রায়ের পর অবিলম্বে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে শপথ গ্রহণের ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় আগামীকাল থেকে নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়ে এ আন্দোলন আরও বেগবান হবে।” তিনি আরও বলেন, “আপনারা শপথ নিয়ে যে টালবাহানা করছেন, তারই পরিপ্রেক্ষিতে নগর ভবনের সব কার্যক্রম দুই সপ্তাহ ধরে স্থবির হয়ে আছে। এর কোনো এখতিয়ার আপনাদের নেই।”

নগর ভবনে উপস্থিত সমর্থকরা বিভিন্ন স্লোগানে ইশরাকের প্রতি সমর্থন জানান: “জিতিল জিতিল, জনতা জিতিল”, “এইমাত্র খবর এল, ইশরাক ভাই মেয়র হলো”—এমন নানা স্লোগানে মুখর ছিল নগর ভবন এলাকা। ইশরাক আসার পর তাঁকে ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে বরণ করে নেয়া হয়। তাকে শুভেচ্ছা জানান বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রতিনিধি, শ্রমিক ও কর্মচারীরা।

ইশরাক হোসেন একাধিকবার অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কিছু উপদেষ্টা ও প্রশাসনের একটি অংশ তাঁর শপথ অনুষ্ঠান বাধাগ্রস্ত করেছে। তিনি বলেন, “আপনারা যদি শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন না করেন, তবে এটা আদালতের প্রতি অবমাননার সামিল হবে। জনগণ তখন আপনাদের বিচার করবে।” এ সময় তিনি আরও বলেন, “একজন মেয়রকে যাঁরা শপথ গ্রহণ করাতে ব্যর্থ হয়েছেন, ভবিষ্যতে তাঁরা কীভাবে ৩০০ এমপিকে শপথ করাবেন, সেটা নিয়ে জনমনে সন্দেহ রয়েছে।”

২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন। এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন এবং ২ ফেব্রুয়ারি ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। এরপর অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে মামলা করেন বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন। সেই মামলা বিচারাধীন থাকলেও তাপস দায়িত্ব পালন করে আসেন।

গণ-আন্দোলনের মুখে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। এর কিছুদিন পর, ১৯ আগস্ট, ঢাকা দক্ষিণসহ অন্যান্য সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল চলতি বছরের ২৭ মার্চ তাপসের জয় বাতিল করে ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করে। এই রায়ের ভিত্তিতে ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন গেজেট প্রকাশ করে ইশরাককে মেয়র হিসেবে ঘোষণা দেয়। তবে এর বিরুদ্ধে করা আপিলের নিষ্পত্তি হয় ২৯ মে, যেখানে আপিল বিভাগ গেজেট বহাল রাখার নির্দেশ দেয়।

গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন শুরু করেন ইশরাকের সমর্থকেরা। আন্দোলনের কারণে নগর ভবনের সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। জনসাধারণ সেবা নিতে এসে ফিরে যাচ্ছেন, তৈরি হয়েছে তীব্র জনদুর্ভোগ। মাঝখানে ৪৮ ঘণ্টার বিরতি দিয়ে আন্দোলন আবারও শুরু হয়। এই অচলাবস্থা নিরসনের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

ঢাকাবাসী প্ল্যাটফর্মের সমন্বয়কারী মশিউর রহমান বলেন, “আদালত আবারও ঘোষণা করলেন ইশরাক হোসেনই মেয়র। এই রায়ে জয় হলো জনতার। পরাজয় হলো আসিফের, মাহফুজের এবং এনসিপির।” তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এখন আর কোনো টালবাহানা না করে অবিলম্বে শপথ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নিন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে