১৫ ঘন্টায় উদ্ধার হয়নি শ্রমিক হাবিবের লাশ

এফএনএস (মাহবুব খান বাবুল; সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) :
| আপডেট: ৫ জানুয়ারী, ২০২৫, ১২:৩৫ পিএম | প্রকাশ: ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ০৪:৩৫ এএম
১৫ ঘন্টায় উদ্ধার হয়নি শ্রমিক হাবিবের লাশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে তিতাস নদীতে ডুব দিয়ে নিখোঁজের ১৫ ঘন্টা পরও উদ্ধার হয়নি শ্রমিক হাবিবের (২২) লাশ। গত শনিবার দুপুর ১২টার দিকে উপজেলার অরূয়াইলে মাটি বেঝাই বাল্কহেড নৌকার ফ্যানে আটকানো জাল ছুটাতে নদীতে ডুব দিয়েছিল হাবিব। গতকাল টানা ৬-৭ ঘন্টা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। তারা ধারণা করছেন ঘটনার সময় নৌকাটি এখানে ছিল না। হাবিব নিখোঁজের পর ভয়ে দ্রƒত পালাতে গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নৌকাটি অনেক দূর চলে আসছে। তবে ঘটনাটিকে ২ লাখ টাকায় ধামাচাপা দেওয়ার বিষয়টি চাউর হচ্ছে চারিদিকে। সরজমিন অনুসন্ধান, স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, সম্প্রতি সরাইলের একাধিক হাওরের ফসলি জমি ও নদ নদীর মাটি বেকু দিয়ে কাটার প্রতিযোগিতায় নেমেছে একটি মাটি খেকো সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের সদস্যরা জমির মালিক ফুঁসলিয়ে লাভ দেখিয়ে মাটি বিক্রি করতে বাধ্য করেন। ২ ফুটের চুক্তি করে মাটি কেটে নেন ৬-৭ ফুট গভীরে। এভাবেই পঙ্গু করে দিচ্ছেন জমির ফসল উৎপাদন ক্ষমতা। সুযোগ বুঝে বোনাস হিসেবে জমি সংলগ্ন নদ ও নদীর মাটিও ড্রেজারে তুলে বিক্রি করছেন। মাটি গুলি চড়া মূল্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন। কালিকচ্ছ ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ আকাশি হাওর, পাকশিমুল অরূয়াইল পানিশ্বর ইউনিয়েনের হাওরের ফসলি জমি ও সংলগ্ন তিতাস নদ নদীতে দীর্ঘদিন ধরে এই তান্ডব চালাচ্ছে একটি চক্র। এমনই চক্র ৪-৫ টি এসকে বেটর দিয়ে অরূয়াইলের বারপাইকা এলাকায় ফসলি জমি ও তিতাস নদের মাটি কাটছে দেদারছে। ওই মাটি বাল্কহেড নৌকায় করে বিভিন্ন জায়গায় নেয়ার কাজ চলছে। গত শনিবার ওই মাটিবোঝাই একটি বাল্কহেড নৌকার ফ্যানে জাল পেছিয়ে আটকে যায়। নৌকাটি আর সামনে যাচ্ছিল না। নদীতে মাছ ধরছিল বারপাইকা গ্রামের মো. সামছু মিয়ার ছেলে মো. হাবিব মিয়া। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হাবিবকে নৌকার লোকজন পানির নীচের ফ্যান থেকে জালটি ছাড়িয়ে দিলে ৫ হাজার টাকা দেয়ার কথা বলেন। ৫ হাজার টাকার লোভে হাবিব নদীর পানিতে ডুব দিয়ে জাল ছাড়ানোর চেষ্টা করেন। প্রথম দুইবার ডুব দিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসেন। বিকেল ৩ টার দিকে তৃতীয় ডুব দিলে আর পানির উপরে আসেননি হাবিব। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরও যখন হাবিবের সন্ধান মিলছিল না তখন নৌকাটিকে টেনে দ্রƒত ঘটনাস্থল থেকে পালানোর চেষ্টা করেন মাটি ও নৌকার লোকজন। এক পর্যায়ে তারা নদীতে নৌকাটি ফেলেই সটকে পড়েন। কয়েক ঘন্টার মধ্যে নদীর আশপাশ ও ফসলি জমি গুলো থেকে ৪-৫ টি এসকে বেটর নাই হয়ে যায়। জনশুন্য হয়ে পড়ে ওই হাওর। নিখোঁজের ৯ ঘন্টা পর গতকাল রোববার লিডার রিয়াজ আহমেদের নেতৃত্বে ১২টার দিকে ভৈরব ফায়ার সার্ভিসের ৪ জন ডুবুরিসহ সরাইল ফায়ার সার্ভিসের ৬ সদস্য তিতাস নদে যান। দীর্ঘ ৬-৭ ঘন্টা নদীতে ডুবিয়েও হাবিবের লাশ উদ্ধার করতে পারেননি ফায়ার সার্ভিসের ওই দলটি। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরাইল ফায়ার সার্ভিসের লিডার রিয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা দীর্ঘ ৪-৫ ঘটনা চেষ্টা করেও হাবিবের লাশ উদ্ধার করতে পারছি না। আরো চেষ্টা করছি। তবে ধারণা করছি হাবিব যেখানে নিখোঁজ হয়েছিল নৌকাটি এখন সেখানে নেই। দ্রƒত সটকে পড়ার চেষ্টা করে টেনে নৌকাটি দূরে নিয়ে আসছে। তাই হাবিবকে আমরা পাচ্ছি না। চেষ্টা চলছে। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে