ইসরায়েলের তেল স্থাপনায় ইরানের মিসাইল হামলায় শোধনাগারে আগুন, নিহত ৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
| আপডেট: ১৭ জুন, ২০২৫, ০১:০৩ পিএম | প্রকাশ: ১৭ জুন, ২০২৫, ০১:০৩ পিএম
ইসরায়েলের তেল স্থাপনায় ইরানের মিসাইল হামলায় শোধনাগারে আগুন, নিহত ৩

ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফায় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে দেশটির সবচেয়ে বড় তেল শোধনাগার কমপ্লেক্সে। এতে অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন, যাঁরা শোধনাগারটিতেই কাজ করতেন। শুরুর দিকে এ হামলার তথ্য গোপন রাখলেও পরে প্রাণহানির ঘটনা প্রকাশ্যে এলে ইসরায়েল সরকার হামলার সত্যতা স্বীকার করে।

ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার (১৬ জুন) ভোররাতে, আর ইসরায়েলি সরকার সন্ধ্যায় এ বিষয়ে তথ্য প্রকাশের অনুমতি দেয় বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল ও হারেৎজ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওইদিন রাতভর ইরানের একাধিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের হাইফা, পেতাহ টিকভা ও বনে ব্রাক শহরে আঘাত হানে। হাইফায় বাজান তেল শোধনাগারে হামলার পাশাপাশি শহরের বেশ কিছু আবাসিক ভবনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেতাহ টিকভায় চারজন এবং বনে ব্রাকে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানানো হয়।

হাইফা শহরের মেয়র ইয়োনা ইয়াহাভ চ্যানেল ১২ নিউজকে বলেন, “নিহতরা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় কর্মরত ছিলেন।” যদিও শুরুতে ওই স্থাপনার নাম গোপন রাখা হয়েছিল, পরে নিশ্চিত হওয়া যায় যে সেটি ছিল হাইফা উপসাগরের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত বাজান তেল শোধনাগার কমপ্লেক্স।

হামলার পরপরই কমপ্লেক্সটিতে আগুন ধরে যায়। প্রচণ্ড তাপ ও ধোঁয়ার কারণে উদ্ধার কাজ ব্যাহত হয়। হারেৎজ জানিয়েছে, নিহত তিনজন সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে মারা যাননি, বরং শ্বাসরুদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। উদ্ধারকারীরা শুরুতে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হলেও পরে সেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

নিহতদের পরিচয় প্রকাশ না করা হলেও তাঁরা হাইফা ও আশপাশের ক্রাইয়ট এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বলে জানা গেছে। ওই সময় আরও দুইজন কর্মী শোধনাগারে উপস্থিত ছিলেন, যাঁরা হালকা আহত হয়ে প্রাণে বেঁচে যান।

হাইফায় অবস্থিত এই তেল শোধনাগারটি শুধু ইসরায়েলের বৃহত্তম জ্বালানি কেন্দ্রই নয়, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত স্থাপনাও। এতে একটি প্রধান বন্দর ও নৌঘাঁটিও রয়েছে। অনেকদিন ধরেই এটি ইসরায়েলের শত্রুদের সম্ভাব্য লক্ষ্যবস্তু হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছিল। হিজবুল্লাহসহ ইরান-ঘনিষ্ঠ গোষ্ঠীগুলো একে আঘাত হানার হুমকি দিয়ে এসেছে।

২০২২ সালে ইসরায়েল সরকার ঘোষণা দিয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে শোধনাগারটি সরিয়ে নেওয়া হবে। চলতি বছর থেকেই পাশের বড় তেল ট্যাংক সরানোর কাজ শুরু হওয়ার কথা। মেয়র ইয়াহাভ বলেন, “সরকারের এখন সাহস দেখিয়ে এই কারখানাগুলোকে আবাসিক এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া উচিত।”

উল্লেখ্য, হাইফার পরিবেশবাদী ও নাগরিকরা দীর্ঘদিন ধরে এই শোধনাগার সরানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল, এ ধরনের কৌশলগত স্থাপনায় হামলা হলে তা মানবজীবন ও পরিবেশের জন্য ভয়াবহ বিপদ ডেকে আনবে— এবারের হামলা যেন সেই আশঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিল।

একইসঙ্গে ইসরায়েলি পুলিশ জানায়, হামলার পরপরই আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সরাসরি সম্প্রচারকারী সাংবাদিকদের সরিয়ে নিতে বিশেষ ইউনিট ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়। উপকূলীয় জেলার পুলিশের গাড়িগুলো ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়।

ইরানের এই হামলা ‘আয়রন ডোম’সহ ইসরায়েলের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর একাধিক আঘাত প্রমাণ করে যে, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার ফাঁক গলে কিছু মিসাইল লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম হয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে