এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২৩ জুন, ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম
এনবিআর চেয়ারম্যানকে অপসারণের দাবিতে ‘কমপ্লিট শাটডাউনের’ হুঁশিয়ারি

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানকে অপসারণের দাবিতে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজস্ব প্রশাসন। আন্দোলনকারী প্ল্যাটফর্ম ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, চেয়ারম্যানকে অপসারণ না করা হলে শনিবার (২৮ জুন) থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু হবে।

সোমবার (২৩ জুন) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে রাজস্ব ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা। তারা অভিযোগ করেন, এনবিআর চেয়ারম্যান “ক্ষমতার অপব্যবহার করে বদলি ও নিপীড়নের মাধ্যমে রাজস্ব প্রশাসনে ভয়ভীতি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছেন।”

এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে ওই দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কলম বিরতি এবং রাজস্ব ভবনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন সহস্রাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। অনেককে ‘কাফনের কাপড়’ পরে প্রতিবাদ জানাতে দেখা যায়।

চলমান আন্দোলনের মধ্যে রোববার (২২ জুন) আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলি করে এনবিআর। বদলিকৃতরা হলেন—

১. উপ কর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী: আয়কর গোয়েন্দা থেকে ময়মনসিংহ কর অঞ্চলে

২. উপ কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম: ঢাকা কর অঞ্চল-১৬ থেকে খুলনায়

৩. উপ কর কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফ: বোর্ড অফিস থেকে বগুড়ায়

৪. উপ কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিল: আয়কর গোয়েন্দা থেকে কুমিল্লায়

৫. উপ কর কমিশনার নুসরাত জাহান শমী: কুমিল্লা থেকে রংপুর কর অঞ্চলে

আদেশে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মঙ্গলবারের (২৪ জুন) মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগদান এবং সোমবারের (২৩ জুন) মধ্যে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে।

ঐক্য পরিষদ এসব বদলিকে ‘নিপীড়নমূলক ও চাকরি বিধিবহির্ভূত’ দাবি করে জানিয়েছে, এই আদেশগুলো সোমবারের মধ্যে বাতিল না হলে ২৫ ও ২৬ জুন ঢাকাসহ সারাদেশে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি ও কলম বিরতি পালন করা হবে। একইসঙ্গে 'চেয়ারম্যান ও তার দোসরদের' প্রতি ঘৃণা প্রকাশের কর্মসূচিও চলবে।

সংবাদ সম্মেলনে পরিষদ আরও জানায়, “চেয়ারম্যান বদলি নীতিমালা লঙ্ঘন করে সিনিয়র কর্মকর্তাদের টার্গেট করছেন। তিনি একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাইরে থেকে লোক জড়ো করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে অশান্ত করতে চাইছেন।” এসব কর্মকাণ্ডের কারণে স্বাভাবিক কাজের পরিবেশ বিঘ্নিত হচ্ছে এবং রাজস্ব আহরণেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে সতর্ক করেন আন্দোলনকারীরা।

এর আগে, মে মাসে সরকার এনবিআরকে দুটি বিভাগে ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করলে এনবিআর কর্মকর্তারা তাতে প্রতিবাদ জানান। আন্দোলনের মুখে সরকার আলোচনার আশ্বাস দিলে কর্মসূচি স্থগিত হয়। তবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলমান থাকে এবং তাকে এনবিআর কার্যালয়ে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়।

পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নিরাপত্তায় অফিসে ফিরলেও চেয়ারম্যান আবদুর রহমানের সঙ্গে কর্মকর্তাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। এখন তিনি আন্দোলনে যুক্ত কর্মকর্তাদের একের পর এক বদলি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে জুন মাসের শেষ সপ্তাহেই জাতীয় রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের অচলাবস্থা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে