আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী নূরান ফাতেমার বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের নামে থাকা মোট ২১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে এবং ৮৫ লাখ টাকা মূল্যের একটি বিলাসবহুল জিপ গাড়ি জব্দ করা হয়েছে।
সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়, সাবেক মন্ত্রী ও চট্টগ্রাম-৭ (রাঙ্গুনিয়া) আসনের সংসদ সদস্য ড. হাছান মাহমুদ মন্ত্রী ও এমপি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ১ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৩১৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেন।
তাঁর নিজ নামে, যৌথ ও মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত ৯টি ব্যাংক হিসাবে ৩৯ কোটি ৭৬ লাখ ৩৭ হাজার ৫৬৭ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে, যা অর্থপাচারের শামিল বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৬ এপ্রিল দুদক মামলাও দায়ের করেছে।
অপরদিকে হাছান মাহমুদের স্ত্রী নূরান ফাতেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি স্বামীর প্রভাব ও সহায়তায় জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫ কোটি ৫২ লাখ ৭৮ হাজার ১৯০ টাকার সম্পদের মালিক হন।
এছাড়া তাঁর নিজ নামে, যৌথ মালিকানায় ও প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত মোট ৫৬টি ব্যাংক হিসাবে ৬৮৩ কোটি ১৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫৫৪ টাকার ‘অস্বাভাবিক’ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যা মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
দুদক মনে করে, এই দম্পতি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করায় এবং তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকায় বিদেশে অবস্থান থেকে তাঁরা তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারেন অথবা প্রমাণাদি গোপন বা নষ্ট করতে পারেন। এ কারণেই তদন্তের স্বার্থে তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এর আগে ১৬ জানুয়ারি আদালত হাছান মাহমুদ ও তাঁর পরিবারের মোট ৭৭টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছিলেন। গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে হাছান মাহমুদকে দেশে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। এমনকি গত রমজানে লন্ডনের একটি মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন বলেও সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়।
দুদকের সহকারী পরিচালক আল-আমিন এ সংক্রান্ত পৃথক দুটি আবেদন করলে আদালত শুনানি শেষে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।