রাজধানীর গুলশানে আয়োজিত ‘কমনওয়েলথ চার্টার যুব কর্মশালা’ অনুষ্ঠানে সোমবার (২৩ জুন) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া দেশের স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা ও তরুণ প্রজন্মের অবদানের কথা তুলে ধরেন।
আসিফ মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায় ছিল যেখানে বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও নির্বাচনে অবাধ হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অসংখ্য পরিবার ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। বিগত স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা তরুণদের ভোটাধিকার হরণ, তাদের কণ্ঠরোধ এবং ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নিয়েছিল। পুরো একটি প্রজন্ম সুষ্ঠু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা ছাড়াই বড় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এই স্বৈরাচারী শাসন দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, বাকস্বাধীনতা বিলোপ করেছে এবং মানুষের সকল অধিকারকে হরণ করেছে। একই সঙ্গে দেশের অর্থ পাচারসহ বড় ধরনের দুর্নীতির মাধ্যমে জাতীয় সম্পদ ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
আসিফ মাহমুদ তরুণদের সাহস, ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা স্মরণ করে বলেন, “তরুণরাই ছিল আলোকবর্তিকা যারা একটি নতুন যুগের জন্য সংগ্রাম করেছিল। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণেরা জীবন উৎসর্গ করেছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের জন্য।” তাদের উদ্যোগে স্বৈরাচারী কাঠামো ভেঙে নতুন দিনের সূচনা সম্ভব হয়েছে।
তিনি জানান, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মাত্র শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন নয়, ব্যাপক সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, যারা বিভিন্ন স্তরের অংশীদার, বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসবের মধ্য থেকে ১২১টি প্রস্তাব দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
আসিফ মাহমুদ আশা প্রকাশ করেন, ‘জুলাই সনদ’ প্রণয়ন সম্পন্ন হলে এতে দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে এবং সুষ্ঠু গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত হবে। তিনি বলেন, “জুলাই সনদের মাধ্যমে গণ-অভ্যুত্থানে তরুণদের দেখা স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।”
উপদেষ্টা বলেন, কমনওয়েলথ চার্টার হলো ৫৬টি সদস্য রাষ্ট্রের জন্য একটি নৈতিক কম্পাস, যা আইনের শাসন, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তিতে এগিয়ে নিয়ে যায়। চার্টারের আদর্শকে শুধু আদর্শিক নয়, বাস্তব জীবনে প্রয়োগ ও রক্ষার মধ্য দিয়ে তরুণরা দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
তিনি যুব সমাজকে উৎসাহিত করেন সক্রিয় অংশগ্রহণের জন্য এবং বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে গণতন্ত্র কখনো বিপন্ন হবে না এবং প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার, স্বাধীনতা ও মর্যাদা সুরক্ষিত থাকবে।”
কমনওয়েলথের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল লুইস গ্যাব্রিয়েল ফ্রান্সেসচি বলেন, “বাংলাদেশের তরুণেরা ইতোমধ্যে এমন কিছু করেছে যা গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়েছে। তারা আগামী দিনে এমন বিশ্ব গড়ে তুলবে যেখানে সবাই একে অপরের সহযোগী হবে।”