ভোটাধিকার হরণ ও রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে তিন দিনের রিমান্ডে দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এই আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভয়ভীতি, গুম-খুন, গণগ্রেপ্তার ও নির্বাচনপ্রক্রিয়ায় সরাসরি হস্তক্ষেপ’-এর অভিযোগ এনে বিএনপি এই মামলা করে। মামলায় একাধিক সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনার, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, এই নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে এবং সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন নিজেদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে।
শনিবার (২২ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান। এতে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষিতে তৎকালীন তিনজন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ মোট ২৪ জনকে আসামি করা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, সংবিধান লঙ্ঘন করে ভয়ভীতি ও অপশক্তি ব্যবহার করে এই নির্বাচনগুলো পরিচালনা করা হয়।
এর মধ্যে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় দায়িত্বে ছিলেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, ২০১৮ সালে কে এম নূরুল হুদা এবং ২০২৪ সালে কাজী হাবিবুল আউয়াল। তাঁদের সবাইকেই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে।
বুধবার (২৫ জুন) রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে হাবিবুল আউয়ালকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। পরদিন বৃহস্পতিবার আদালতে তোলা হলে তদন্ত কর্মকর্তা ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানির পর বিচারক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে একই মামলায় গত রোববার (২৩ জুন) সাবেক সিইসি কে এম নূরুল হুদাকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সোমবার (২৪ জুন) আদালত তাঁর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
মামলার মূল অভিযোগে বলা হয়, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ছিল পক্ষপাতদুষ্ট ও বেআইনি। সংবিধান রক্ষার পরিবর্তে তারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ধরে রাখতে নির্দিষ্ট একটি রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিতে নির্বাচনী অনিয়মে অংশগ্রহণ করেন।
বলা হয়, গায়েবি মামলা, গণগ্রেপ্তার, অপহরণ ও গুমের মাধ্যমে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে দূরে রাখা হয়। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার পরিবর্তে সরকারি কর্মচারী হিসেবে তারা অবৈধভাবে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করেন।
এছাড়া, যেসব প্রার্থীরা প্রকৃত ভোট না পেয়েও সংসদ সদস্য হিসেবে জয়ী ঘোষণা পেয়েছেন, তা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অনিয়ম ও কারচুপির স্বাক্ষী হিসেবে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে—প্রতিটি ভোটকেন্দ্র এলাকার ভোটার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিং অফিসারদের।
এই মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে আছেন—
• সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
• সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল
• সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, জাবেদ পাটোয়ারী, এ কে এম শহীদুল হক
• সাবেক র্যাব ডিজি বেনজীর আহমেদ
• সাবেক নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম, রফিকুল ইসলাম
• সাবেক ডিজিএফআই, এনএসআই প্রধান ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, নির্বাচনে ব্যবহৃত ব্যালট পেপারে সিল ও স্বাক্ষরের মাধ্যমে প্রকৃত ভোটারদের শনাক্ত করা যাবে। সেসব ভোটারদের ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনের দাবি জানানো হয়েছে। মামলায় নতুন করে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের ধারাও যুক্ত করা হয়েছে।