বাংলাদেশে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলোচনায় বিএনপির নেতা সালাহউদ্দিন বলেন, “যদি কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন সত্যিকার অর্থে নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে, তাহলে স্বৈরাচারের উৎপত্তি রোধ করা সম্ভব।” শুধু নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করলেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় প্রয়োজন নির্বাহী, আইন ও বিচার বিভাগের মধ্যে ভারসাম্য ও সহযোগিতা।
তিনি বলেন, “নির্বাহী বিভাগ তার কাজ করবে, বিচার বিভাগ তার নিজস্ব এখতিয়ার অনুসারে চলবে এবং আইনসভা আইন প্রণয়ন করবে। এই সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারসাম্যই গণতন্ত্রের ভিত্তি।”
সালাহউদ্দিন আহমদ বিএনপির পক্ষ থেকে যেসব প্রস্তাব তুলে ধরেন তা হলো:
১. প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমাবদ্ধ রাখা – যাতে কোনো ব্যক্তি দীর্ঘকাল ক্ষমতায় থেকে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করতে না পারেন।
২. বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করা – এটিকে গণতন্ত্রের অন্যতম রক্ষাকবজ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
৩. গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা – সাংবাদিকদের যেন মালিকের চাকরি নয়, বিবেকের নির্দেশনায় কাজ করার সুযোগ থাকে।
৪. নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা – যাতে সব দলের আস্থার ভিত্তিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হয়।
৫. রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে গোপন ব্যালটে উভয় পক্ষের এমপিদের স্বাধীন ভোটাধিকার – একে তিনি আরেকটি গণতান্ত্রিক বিপ্লব বলে উল্লেখ করেন।
৬. সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে সংস্কার – যাতে সংসদ সদস্যদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা যায়।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা যতটা না হচ্ছে, খানাপিনা যেন বেশি হচ্ছে।” তবে আলোচনার মাধ্যমে ঐকমত্য আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “আমরা সেই সংস্কার চাই, যা কোনো বিভাগের ক্ষমতা খর্ব না করেই সকল প্রতিষ্ঠানকে স্বাধীনভাবে কাজের সুযোগ করে দেবে। নির্বাহী বিভাগকে একচেটিয়াভাবে দায়ী না করে বরং চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স ও হারমোনিয়াস কোঅপারেশনের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।”
সভায় সভাপতির বক্তব্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। খরগোশের মতো কান, যাতে সব সময় সতর্ক থাকা যায়।”
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সভাপতি মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণফোরামের মোহাম্মদ উল্লাহ মধু, সিপিবির রুহিন হোসেন প্রিন্স ও গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল।