রাজধানীর চাঁনখারপুলে আনাসসহ ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় চারজন আসামিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করে এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
রোববার (২৯ জুন) সকালে কারাগার থেকে চার আসামিকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। তারা হলেন: শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন, মো. নাসিরুল ইসলাম,
অন্যদিকে, মামলার অপর পলাতক আসামিরা এখনো ধরা পড়েননি। তাদের মধ্যে রয়েছেন— ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
তাদের গ্রেফতারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চেষ্টা অব্যাহত আছে। পলাতক আসামিদের আদালতে হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত রাজধানীর চাঁনখারপুল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এক শান্তিপূর্ণ সমাবেশে নিরস্ত্র আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়। এতে নিহত হন: শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদি হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক, মানিক মিয়া শাহরিক।
তদন্তে উঠে এসেছে, পলাতক হাবিবুর রহমানসহ অন্যান্য আসামিরা সরাসরি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন অথবা পুরো ঘটনা তত্ত্বাবধান করেছেন। তারা অধীনস্থ পুলিশ সদস্যদের নির্দেশনা, সহযোগিতা এবং সহায়তার মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এমনকি অধীনস্থদের এই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ থেকে বিরত রাখেননি বা পরবর্তী সময়ে কোনো ব্যবস্থা নেননি।
গত ৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গত ২৫ মে আমলে নেয়। ওই দিন চিফ প্রসিকিউটর আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র উপস্থাপন করেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসঙ্গে চিফ প্রসিকিউটর জানান, দীর্ঘ ১৯৫ দিন তদন্ত শেষে ৯০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেওয়া হয়েছে। এতে রয়েছে:
৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি, ১৯টি ভিডিওচিত্র, ১১টি পত্রিকার প্রতিবেদন, ২টি অডিও প্রমাণ, ১১টি বই ও রিপোর্ট ও ৬টি মৃত্যু সনদ।
রোববার (২৯ জুন) আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আদালত পলাতক আসামিদের অনুপস্থিতিতেই বিচার শুরুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারে।