চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ৪৪ জনের কারও মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হলেও শুধুমাত্র বির্তকিত টাউন প্লানারের মেয়াদ বৃদ্ধি করার খবরে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময়ে নিয়োগ পাওয়া সম্পূর্ণ নিয়মবর্হিভূত এই টাউন প্লানারের মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা কতোটুকু বৈধ তা নিয়ে চাকরিচ্যুত কর্মচারিদের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ।
মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বিকেলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তরা জানিয়েছেন, বরিশাল সিটি করপোরেশন বিগত মেয়রদের আমলে অস্থায়ী ভিত্তিতে তাদের ৪৪ জনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এরমধ্যে মেয়াদোর্ত্তীন হওয়ায় তাদের কারো মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়নি। তবে শুধুমাত্র বির্তকিত টাউন প্লানারের মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে। যা সম্পূর্ণ অন্যায়। তারা আরও বলেন, যে পদ (টাউন প্লানার) অর্গানোগ্রামে নেই, সেই পদে মেয়াদ কি করে বৃদ্ধি করবে বিসিসি কর্তৃপক্ষ।
সূত্রমতে, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাত বিসিসির মেয়র থাকাকালীন বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের জোরালো সুপারিশের কারণে ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বিসিসিতে চাকরি পান সৈয়দ তাবাসসুম ইসলাম।
ওইসময় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলেও কোন নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই তাকে (সৈয়দ তাবাসসুম ইসলাম) চাকরি দেয়ায় শুরু থেকেই বিষয়টি বিতর্কিত ছিল সিটি কর্পোরেশনে। বিগত ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে সৈয়দ তাবাসসুম ইসলামকে নিয়ে বিসিসিতে তুমুল হট্টগোল শুরু হয়।
ওইসময় সৈয়দ তাবাসসুম ইসলামের বাবা মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির চলমান আহবায়ক কমিটির সিনিয়র সদস্য রফিকুল ইসলাম লাবু এবং প্রভাবশালী এক বিএনপি নেতার অবৈধ তদবিরের কারণে সৈয়দ তাবাসসুম ইসলাম বিসিসিতে বহাল তবিয়তে থেকে যান।
ফ্যাসিস্ট সরকারের সাথে আতাত করে ফায়দা নেয়া রফিকুল ইসলাম লাবু মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপিতে আগে থেকেই বেশ আলোচিত-সমালোচিত। সবশেষ চলতি বছরের ২২ এপ্রিল এক খোলা চিঠিতে তিনি (লাবু) মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা বিএনপিকে চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী, টেন্ডারবাজ ও লুটপাটতন্ত্রের আখড়া দাবি করেন। পাশাপাশি চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা, অসাংগঠনিক কর্মকান্ডসহ নানা অজুহাতে বিএনপির ওপর দায় চাঁপিয়ে দল থেকে পদত্যাগ করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৯ অক্টেবর বিসিসির এক সাধারণ সভায় টাউন প্লানার, শশ্মান গার্ড, সিকিউরিটি গার্ড, ইপিআই সুপারভাইজারসহ বিভিন্ন পদে অর্গানোগ্রামের বাহিরে যারা চুক্তিভিত্তিক নিয়োজিত রয়েছেন তাদের চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিসিসির সাবেক প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী ওই সভার সভাপতিত্ব করেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত প্রায় এক বছর অতিবাহিত হলেও কার্যকর করেননি বিসিসির নতুন প্রশাসক মো. রায়হান কাওছার। তবে ওই অবৈধ নিয়োগ প্রাপ্তদের যার যখন মেয়াদ শেষ হচ্ছে তাকে তখনই ছাটাই করা হচ্ছে। সে অনুযায়ী অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত টাউন প্লানার পদের তাবাসসুম ইসলামের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা চলতি মাসের ৩১ জুলাই। কিন্তু তাকে বাদ দেয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়িয়ে মেয়াদ বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে বিসিসি কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কাওছার বলেন, মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তার চাকরি হয়েছিল। কিন্তু অর্গানোগ্রাম বহির্ভূত পদে নিয়োগ পাওয়া অবৈধ কিনা সে ব্যাপারে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।