পাঁচ বছর আগে ‘মিডসমার’ ও ‘হেরেডিটারি’র মাধ্যমে মনস্তাত্ত্বিক হররধর্মী চলচ্চিত্র নির্মাণে নিজের স্বকীয়তা প্রমাণ করেছিলেন আমেরিকান পরিচালক আরি অ্যাস্টার। এবার তিনি ফিরলেন ফের পর্দায় বিভ্রান্তিকর, জটিল ও ব্যতিক্রমী গল্পের সিনেমা ‘এডিংটন’ নিয়ে। আজ বিশ্বজুড়ে মুক্তি পেয়েছে সিনেমাটি। ইতোমধ্যেই বিশ্বের নামকরা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয়েছে সিনেমাটি। সমালোচকদের মতে, এটি এমন এক ব্যঙ্গচিত্র, যা আমাদের বর্তমান সমাজব্যবস্থার নানা স্তরের ভাঙনকে গভীরভাবে স্পর্শ করে; যা অনেকের জন্যই আবার হজমযোগ্য নয়। ‘এডিংটন’-এর পটভূমি যুক্তরাষ্ট্রের নিউ মেক্সিকোর একটি কাল্পনিক ছোট শহরকে কেন্দ্র করে। সময়কাল ২০২০ সালের মে মাস। করোনাকালের সেই অস্থির সময়। যখন মাস্ক বাধ্যতামূলক, মানুষ ঘরবন্দি, সোশ্যাল মিডিয়ায় নানা ভীতিকর তত্ত্বের ছড়াছড়ি, আবার রাস্তায় চলছিল ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার আন্দোলনও। এই প্রেক্ষাপটে দেখা যায় জো ক্রস নামে এক শান্ত স্বভাবের টাউন শেরিফ বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তাকে। চরিত্রে অভিনয় করেছেন জোয়াকিন ফিনিক্স। তিনি নিজেও দ্বিধায় ভোগেন- একদিকে স্ত্রী, পরিবার ও শাশুড়ির সঙ্গে জটিল সম্পর্ক, অন্যদিকে রাজনৈতিকভাবে মাস্ক পরা না পরা নিয়ে রীতিমতো সামাজিক সংঘর্ষ। জোর করে ‘মাস্ক পরা’র বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যান তিনিও। তার প্রতিপক্ষ, স্থানীয় মেয়র টেড গার্সিয়া (পেদ্রো পাসকাল)-এক চতুর, ক্যারিশমেটিক নেতা, যিনি রাজনীতিতে সোশ্যাল মিডিয়া ও সিঙ্গেল প্যারেন্ট ইমেজকে কাজে লাগাতে সিদ্ধহস্ত। জোর স্ত্রী লুইস, চরিত্রে এমা স্টোন, যিনি নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং পরে এক অনলাইন গুরু (অস্টিন বাটলার)-এর প্রভাবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। এসব নিয়েই দারুণভাবে আগায় গল্প। ছবিটির অন্যতম উল্লেখযোগ্য দিক হলো- এখানে সবাইকে কম-বেশি বিকৃত বা বিভ্রান্ত হিসেবে দেখানো হয়েছে। সিনেমাটিতে ব্যঙ্গাত্মক ভাষায় তুলে ধরেছে- কীভাবে মানুষ, পরিস্থিতি আর প্রযুক্তির প্রভাবে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে, কীভাবে ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ও অনলাইন প্রপাগান্ডা সাধারণ মানুষকেও উন্মাদনায় ঠেলে দেয়। এখানে ‘হিরো’ বা ‘ভিলেন’ কে সেটা স্পষ্ট নয়; বরং সব পক্ষই নিজের মতো করে আবেগপ্রবণ ও বেপরোয়া। সিনেমার এক কিশোরী অ্যাক্টিভিস্ট কৃষ্ণাঙ্গ পুলিশকে আন্দোলনে যোগ দিতে বলছে; আবার শেরিফের সহযোগী নিজ সহকর্মীকে হঠাৎ হত্যাকারী বলে অভিযুক্ত করছে। কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরের প্রতিযোগিতার বাইরে (আউট অব কমপিটিশন) বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি। এখানে প্রদর্শনের পর সমালোচকরা ছবিটিকে অভিহিত করেছেন “পরবর্তী-সত্য যুগের জন্য এক সাহসী ও জ্বলন্ত ব্যঙ্গচিত্র হিসেবে। উৎসবে প্রদর্শনের পর দর্শকরা প্রায় দশ মিনিট ধরে টানা করতালি দিয়েছেন। একই সঙ্গে সিনেমাটি প্রদর্শিত হওয়ার পর বিশ্লেষকদের মন্তব্য ছিল, এডিংটন এমন এক ধরনের সিনেমা, যা দেখা শেষে মাথায় অসংখ্য প্রশ্ন নিয়ে বাড়ি ফিরতে হয়। এটি যেমন বিভ্রান্ত করে, তেমনি সাহসীও।