রাজশাহীর তানোর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে মুন্ডুমালা পৌর এলাকার ময়েনপুর গ্রামর প্রায় ৪শ' বছরের পুরোনো বট আর পাকুড় গাছের যুগলবন্দী দৃষ্টিনন্দন রহস্যে ঘেরা বটবৃক্ষের গল্প শুনিয়ে বাচ্চাদের ঘুম পাড়ান মায়েরা। গাছটির প্রকৃত বয়স কত? তা নিশ্চিতভাবে জানা না গেলেও এলাকায় ওই গাছটি রহস্য ঘেরা বটবৃক্ষ’ হিসেবে পরিচিত এবং সমাদৃত। বিভিন্ন এলাকা থেকে এই গাছ দেখতে এসে মুদ্ধ হচ্ছেন দর্শনার্থীরাাও। গাছ নিয়ে আলাপ চারিতার পাশাপাশি তুলছেন ছবিও।
স্থানীয়দের বলছেন, প্রায় ৪শ' বছর ধরে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটিকে শুধু বট গাছ বললে ভুল হবে, বট আর পাকুড় বৃক্ষের দৃষ্টিনন্দন যুগলবন্দী এক রহস্য ঘেরা এই বৃক্ষ। এর মুল গোড়া কোনটি তাও কেউ নিশ্চিত ভাবে বরতে পারেন না কেউ। তবে, দেখতে ঘোড়ার মত। ময়েনপুর গ্রামের প্রবেশ মুখে রাস্তার ধারে বিশাল এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে গাছটির শাখা প্রশাখা। শিকড় বাকড়ে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। বট গাছটি আজও রয়েছে তাজা তরুণ আর চিরসবুজ। বার্ধক্যের ছাপ একটুও পড়েনি। সে কারণেই এ বট গাছকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্যের পাশাপাশি কল্প কাহিনী।
গাছটি ঘিরে এলাকায় নানা রহস্যে ও কল্পকাহিনী চলে আসছে বংশ পরম্পনায়। এসব বিবেচনায় দাবি উঠেছে গাছটিকে প্রাচীন ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকিয়ে রাখার। এটি একটি মূল্যবান প্রত্ন সম্পদ হিসেবেও রক্ষণাবেক্ষণের দাবি সচেতন মহলের। ইতিহাস-ঐতিহ্যের অনেক দুর্লভ তথ্য অনুসন্ধানে গবেষকদের জন্য গাছটি মূল্যবান উপাদানও হতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয় মুসলমান সম্প্রদায়রা গাছটির তলায় বছরে দুইবার ঈদের নামাজ আদায় করেন।
ঈদের নামাজের পাশাপাশি হিন্দু মুসলমান সম্প্রদায়ের নানা কাহিনী প্রচলিত রয়েছে গাছকে ঘিরে। সেসব কাহিনী ৪শ' বছর আগে থেকে উপমহাদেশের হিন্দু মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক বিরল দৃষ্টান্ত। গাছটি এখনো কালের সাক্ষী হয়ে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছে মাথা উঁচু করে। গাছটি কাছে টানে সকল বয়সী মানুষদের। গাছটির শীতল ছায়ায় মন জুড়িয়ে যায় ক্লান্ত পথিকদের। মজার ব্যাপার হলো মায়েরা ছোট বাচ্চাদের এ গাছের গল্প বলতে বলতে ঘুম পাড়ান এখনো। ছোটবেলা থেকে এ ধরনের গল্প শুনতে শুনতে তাদের মধ্যে ভয়ভীতিসহ নানা রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ গাছ সম্পর্কে অনেকের অনেক রকম ধারণাও জন্মেছে। রয়েছে অনেক ঘটনাও।
ময়েনপুর গ্রামের বাসিন্দা আতাউর রহমান বলেন, গাছ সংলগ্ন ওই জায়গা সরকারি খাস সম্পত্তির তালিকাভুক্ত। এই বট গাছটি কত শত বছর আগের তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারেননা। এমনকি অনেক বয়স্ক মানুষই এই বটগাছের ইতিহাস সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি। শুধু এটাই বলতে পারেন যে তারা এই পৃথিবীর বুকে জম্মানোর পর থেকেই সেই একই রকম দেখে আসছেন এই গাছটি।
বটগাছরে নিচে অবস্থিত মন ঘোষ নামের এক চা দোকানী বলেন, তিনি দীঘদিন থেকে বটগাছের নিচে মুদিখানার ব্যবসা করে আসছেন। তিনিও জানেন না এই বটগাছের রহস্য। তবে প্রতিবছরে ঈদের নামাজ আদায় করার জন্য স্থানীয় লোকজন কিছু এলাকা ঘিরে ওই বটগাছের নিচে ঈদগাহ নির্মাণ করেছেন। বর্তমানে অনেকেই এই বটগাছ দেখার জন্য সেখানে আসেন। তিনি বলেন, “পর্যবেক্ষণের অভাবে বটগাছটির সৌন্দর্য্য হারিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি পৃষ্টপোষকতায় সেখানে গড়ে উঠতে পারে বড় ধরনের বিনোদন কেন্দ্র, আর যা থেকে আয় করতে পারবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আহাদ মন্ডল বলেন, এ গাছ দেখতে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসেন। তাই এ গাছটির জন্য তাঁরা গর্বিত ও আনন্দিত।