মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি অব্যাহত, রেপো হার ১০ শতাংশেই বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৩১ জুলাই, ২০২৫, ০৪:৪৯ পিএম
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি অব্যাহত, রেপো হার ১০ শতাংশেই বহাল

মূল্যস্ফীতি কমাতে আর্থিক খাতে কড়াকড়ি অব্যাহত রাখছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর) জন্য ঘোষিত নতুন মুদ্রানীতিতে নীতি সুদহার বা রেপো হার ১০ শতাংশেই অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এ মুদ্রানীতির ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

প্রধান নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রাখার পেছনে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার কৌশলকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গভর্নর। তিনি বলেন, ‘‘জানুয়ারির পর থেকে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। আমাদের লক্ষ্য এটিকে ৩ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। তবে সেটি সময়সাপেক্ষ। বর্তমান বাস্তবতায় ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খারাপ নয়।’’

নতুন মুদ্রানীতিতে বলা হয়েছে, জুনে মাসিক মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে, যা গত এক বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। তবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সমাপ্তিতে গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ০৩ শতাংশ—গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগের অর্থবছরে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য, মূল্যস্ফীতি এখনও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আসেনি বলেই রেপো হার ১০ শতাংশে বহাল রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৮ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলো যেভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয় বা টাকা রাখে, তার ভিত্তিতেই এসব হার কার্যকর হয়।

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘আমানতকারীদের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের অর্থ সম্পূর্ণ নিরাপদ। প্রয়োজনে সরকার বড় অংকের তহবিল সরবরাহ করবে। মুনাফাসহ সেই অর্থ ফেরত নেওয়ার সুযোগ থাকবে।’’

এছাড়া বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং জুন পর্যন্ত ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। পূর্ববর্তী মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত লক্ষ্য ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, তবে অর্জন হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।

সরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৮ দশমিক ১০ শতাংশ, যেখানে গত অর্থবছরে অর্জিত হয়েছে ১৩ দশমিক ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া মুদ্রা সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা সামান্য বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময় অর্জিত হয়েছিল ৭ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, আন্তর্জাতিক অস্থিরতা ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বিবেচনায় কড়াকড়িভিত্তিক মুদ্রানীতি বজায় রাখা হবে। তবে মূল্যস্ফীতি যদি ৭ শতাংশের নিচে নামে, তখন রেপো হার হ্রাস করার সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে