নওগাঁ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রবিউল আলম বুলেট

এফএনএস (রওশন জাহান; মহাদেবপুর, নওগাঁ) : | প্রকাশ: ৪ আগস্ট, ২০২৫, ১২:১২ পিএম
নওগাঁ-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রবিউল আলম বুলেট

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ১০টি আর বদলগাছী উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে জাতীয় সংসদের ৪৮ (নওগাঁ-৩) আসন। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পর ১৯৯১ থেকে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই আসনটি ছিল বিএনপির একচ্ছত্র দখলে। ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বরের পাতানো নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ২০২৪ এর ৫ আগস্ট পর্যন্ত এটি দখলে রাখে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও তাদের বিদ্রোহী দোসররা। আগামী নির্বাচনে এই আসনটি আবার বিএনপির হবে এমনটাই প্রত্যাশা পুরো জেলাবাসীর। 

এই আসনে এবার বিএনপির মনোনয়নপ্রার্থী দুই উপজেলার অন্ততঃ ৪ জন। কমবেশি সবাই মাঠে রয়েছেন। কিন্তু মনোনয়ন দৌড়ে অনেকটাই এগিয়ে মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব রবিউল আলম বুলেট। অন্যদের চেয়ে তিনি একটু বেশিই জনতার কাছাকাছি থাকার সুযোগ পেয়েছেন। কারণ তার বাড়ি উপজেলা সদরেই। অন্য তিন জনই বছরের বেশিরভাগ সময় ঢাকায় থাকেন। তাঁদের নেতাকর্মীরা যখন যখন প্রোগ্রাম সেট করেন, তখন কয়েক দিনের জন্য তাঁরা এলাকায় এসে প্রোগ্রাম সেরে আবার পারি জমান ঢাকায়। যদিও উপজেলা বিএনপির সভাপতি হিসেবে কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচি পালনের দায়িত্ব তারই। এক্ষেত্রে অন্যরা ভিন্ন করে যে কয়টি কর্মসূচি পালন করছেন, তা ই বেশি। কারণ এক্ষেত্রে তাদের দায় নেই। তারাও যে মাঠে রয়েছেন, এটা জানান দেয়ার জন্যই তাদেরকে উপজেলা বিএনপির কর্মসূচির বাইরে একই কর্মসূচি দিতে হয়। এই বিভেদ স্থানীয়রা ভালো চোখে দেখেন না। এদিক থেকে দলীয় প্রত্যেকটি কর্মসূচি ব্যাপকভাবে পালন করতে সক্ষম হন রবিউল আলম বুলেট। এক্ষেত্রে জনসমর্থনও পান বেশি।

এই আসনের অবিসংবাদিত নেতা ১৯৯১ থেকে পর পর ৪ বার ধানের শীষের নির্বাচিত এমপি জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী ২০১৭ সালের ১৯ নভেম্বর মারা যান। এর আগে তিনি যখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ আর সয্যাশায়ী ছিলেন তখনই রবিউল আলম বুলেট ফ্যাসিস্টদের যাঁতাকলে পিষ্ট ভঙ্গুর উপজেলা বিএনপিকে চাঙ্গা করার প্রাণান্ত চেষ্টা শুরু করেন। তার সাংগঠনিক তৎপরতায় ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন নিতে সক্ষম হন। কিন্তু চুড়ান্ত মনোনয়ন নিতে পারেননি। প্রয়াত সাবেক ডেপুটি স্পীকারের পরিবারের সদস্য হিসেবে তার ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি সেবার চুড়ান্ত মনোনয়ন পান। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বরের দিনের ভোট আগের রাতেই বাক্সভরাট করার পলিটিক্সে জিততে পারেননি। এরপর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য ২০১৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচিত সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াছাৎ হায়দার টগর মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও রবিউল আলম বুলেট ৪নং যুগ্ম আহ্বায়ক মনোনীত হন। এটি ছিল দলের একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। বলা হয় যে, ২৮ বছর পর এখানকার বিএনপি ঘরোয়া রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে সাধারণ জনতার কাতারে আসে। এসময়ের কর্মকান্ড ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এতে বুলেট এলাকায় ব্যাপক দলীয় তৎপরতা চালানোর বড় সুযোগ পান। উপজেলার ৯০টি ওয়ার্ড আর ১০টি ইউনিয়নে বিএনপির কমিটি গঠন শেষে সেবছর ২৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে রবিউল আলম বুলেট মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরআগে বুলেট উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলেন। ৯০ এ স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে অসামান্য অবদান রাখেন। সেসময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হলের তিন তালা থেকে তাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা ফেলে দিলে তার হাত-পা ভেঙ্গে যায়। এরশাদের সামরিক শাসনের পর তিনি নিজে উদ্যোগী হয়ে নিষ্ক্রিয় বিএনপির ছাত্রদল ও যুবদল পুনর্গঠন করেন। 

ফ্যাসিস্ট আমলে তিনি অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে প্রতিটি কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। হেফাজত কর্মীদের নিহতের ঘটনায় ২০২১ সালের ৩০ মার্চ নওগাঁ জেলা বিএনপির বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি। নওগাঁ থেকে মহাদেবপুর ফেরার পথে পুলিশ আহত বুলেটসহ মহাদেবপুরের ৮ নেতাকে আটক করে জেল হাজতে পাঠায়। সেসময় গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত অবস্থায় বুলেটকে নেতাকর্মীরা পাঁজাকোলা করে নিয়ে যাওয়ার ছবি ভাইরাল হয়। ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর ঢাকার সমাবেশে রবিউল আলম বুলেটসহ মহাদেবপুরের অসংখ্য নেতাকর্মী পুলিশের লাঠিচার্জ ও গ্রেনেড হামলায় আহত ও গ্রেপ্তার হন। এরপরেও ফ্যাসিবাদের মিথ্যা মামলায় কয়েকবার আটক হন। এসময় তিনি কখনো পালিয়ে এলাকা ছেড়ে যাননি। বরং আত্মগোপনে থেকে প্রায়ই বিভিন্ন ইউনিয়নে ঝটিকা মশাল মিছিল করেছেন। বিভিন্ন মামলায় আটক নেতাকর্মীদের নিজ খরচে জামিন করে এনেছেন, নিয়েছেন পরিবারের সদস্যদের খোঁজখবর। তার সাংগঠনিক বিরাট সাফল্য হলো বিশাল মহিলা দল। তার প্রতিটি প্রোগ্রামে, এমনকি জেলা, বিভাগ ও জাতীয় পর্যায়ের সমাবেশেও বিশাল মহিলাদের বহর দেখা যায়।

ফ্যাসিবাদের পতনের পর সারাদেশে যখন অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়, তখন রবিউল আলম বুলেটের তৎপরতায় মহাদেবপুরে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি বললেই চলে। এখানে কোন হিন্দুর বাড়িতে আগুন দেয়া হয়নি, কারো ঘরবাড়ি দখল করা হয়নি, হামলায় কেউ নিহত হননি, আহতও নন। জুলাই আন্দোলনের পুরোটা সময়ই তিনি ছিলেন ঢাকায় একদম সম্মুখভাগে। তিনি আন্দোলনে সরাসরি অংশ নিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের পানি, সিঙ্গারা প্রভৃতি খাবার দিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর মহাদেবপুর ফিরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে দিন রাত ঘুরে বেরিয়েছেন মহাদেবপুর ও বদলগাছীর আনাচে কানাচে। মন্দিরে মন্দিরে হিন্দুদের নিয়ে সমাবেশ করে তাদের শান্তনা দিয়েছেন। নেতাকর্মীদের নিয়ে তাদের বাড়িঘর পাহারা দিয়েছেন। থমকে থাকা থানা পুলিশকে নিরাপদ রাখতে সহযোগিতা করেছেন। দিনের পর দিন প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে সমাবেশ করে নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছেন অন্যায় না করতে, দখলবাজি, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, গাছ, মাটি, পুকুর, নদী, বালু ইত্যাদি অপকর্মে না জড়াতে। নিজেকে একদম ক্লিন রাখতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। তার বিরুদ্ধে কেউ মাদক, নারী বা অন্য কোন অপবাদ দিতে পারেননি। নেতাকর্মীরা কেউ অন্যায় করতে চাইলে কঠোরভাবে তা প্রতিহত করেছেন। এমন নেতাই তো চান এলাকাবাসী।

এলাকায় নানান তৎপরতায় ব্যস্ত সময় পার করলেও তিনি বিএনপির হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগ রেখেছেন নিয়মিত। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপির বর্ধিত সভায় সারাদেশের জেলা উপজেলা বিএনপি নেতাদের নিয়ে অনলাইনে লাইভে যুক্ত থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে নওগাঁ জেলা থেকে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে বক্তব্য দেয়ার সুযোগ দেয়া হয় রবিউল আলম বুলেটকে। 

বিএনপির হাইকমান্ড যেমনটি চাইছেন, ক্লিন ইমেজের, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই-সংগ্রামে দেশ ও দলের সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করা, সততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, এলাকার জনগণের কাছে একজন ভালো মানুষ হিসেবে সুপরিচিত, সুশিক্ষিত, ভোটের রাজনীতিতে বেশি জনপ্রিয়, দলের প্রতি ত্যাগ, নিঃস্বার্থভাবে দলকে সেবা করা, দুর্দিনে দলের সঙ্গে থাকা, সর্বোপরি যাকে মনোনয়ন দিলে সাধারণ ভোটাররা খুশি হবেন, এমন প্রার্থীই রবিউল আলম বুলেট। 

এই মনোনয়নপ্রত্যাশি জানান, তিনি পূর্ণ শ্রদ্ধায় বিনয়াবনত মস্তকে আশা করেন চুল চেরা বিশ্লেষণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তার হাতেই তুলে দেবেন ধানের শীষ। আর সেটা হলে তিনি নওগাঁ-৩ আসনের মানুষকে একটি বৈষম্যহীন, সুখি, সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার মাধ্যমে বিএনপির কর্মকান্ডকে স্মরণীয় করে রাখতে সক্ষম হবেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে