বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় সারাদেশের মতো রাজশাহীতেও প্রথম জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস (৫ আগস্ট) পালিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রুয়েট) আয়োজিত অনুষ্ঠানে হল রুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জুলাই আন্দোলন থেকে আমাদেরকে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক স্মরণীয় দিন। আমরা যদি বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারি এবং এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি এই পরিবর্তনের নেতৃত্ব দেয় তাহলে নিশ্চয় জুলাই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের যে আকাঙ্খা তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।’ আর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে জুলাই শহিদ পরিবারের সদস্য ছাড়াও জুলাইযোদ্ধারা স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারকে উদ্যেশ্যে করে বক্তব্যে দিতে গিয়ে বলেন, ‘এই দেশে যেন আর কারো প্রাণ না হারায়, কারো অঙ্গহানী না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা আন্দোলনের ফুটেজ দেখে অপরাধিদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধও জানান। এসময় তাঁরা ফ্যাসিস্ট সরকারের দ্রুত বিচার কামনা করে এই বাংলায় আর কখনও ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরি হতে দিবেনা বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন।
দিবসটি উপলক্ষে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট) প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে বিজয় র্যালি, জুলাই স্মৃতিস্তম্ভের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন, আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ, এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ এবং দোয়া মাহফিলসহ দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করে।
দিবসটি উপলক্ষ্যে এদিন মঙ্গলবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, শহিদ জুলাইযোদ্ধা পরিবারের সদস্য ও আহত জুলাইযোদ্ধারা, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আলাদাভাবে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জুলাই শহিদদের শ্রদ্ধা জানান।
এর আগে সকাল ৯টায় রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ নগরীর সিএন্ডবি মোড় চত্বরে জুলাই শহিদ স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ করার মধ্যদিয়ে দিবসটির শুভসূচনা করেন। পরে সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি চত্বরে বিভাগীয় কমিশনার জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে চিত্র প্রদশর্নী পরিদর্শন করেন।
জেলা প্রশাসনের আয়োজনে অনুষ্ঠিত জুলাই শহিদ পরিবার ও জুলাইযোদ্ধাদের সম্মিলন অনুষ্ঠানে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনার পর জুলাই শহিদ পরিবারের সদস্য ও জুলাইযোদ্ধাদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। এরপর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সম্প্রচার শেষে শুরু হয় জুলাই স্মৃতিচারণা।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জুলাই শহিদ শাকিব আনজুম-এর বাবা মাইনুল হক বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখলাম তা শুধু এখানেই প্রচার করলে হবে না, শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রদর্শন করতে হবে। তাহলে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে ফ্যাসিস্ট সরকার কীভাবে নিরস্ত্র সন্তানদের উপর আক্রমণ করেছিল। তিনি শহিদদের সুষ্ঠু বিচার ও আহতদের সুচিকিৎসার দাবি জানান এবং ছেলে জন্য দোয়া প্রার্থনা করেন।
অনুষ্ঠানে জুলাই শহিদ পরিবারের সদস্য ছাড়াও জুলাইযোদ্ধাদের অনেকেই স্মৃতিচারণ করেন। এসময় জুলাইকে রক্ষা করতে হবে উল্লেখ করে বক্তব্যে তাঁরা বলেন, আমরা একটি জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র চেয়েছিলাম, সেটা নিশ্চিত হোক। জুলাই আন্দোলনের সফলতা বাস্তবায়িত এবং সকল বৈষম্য দূর হোক। তাঁরা আরও বলেন, লোক দেখানোর জন্য জুলাই আন্দোলন হয়নি। অনেক ত্যাগের বিনিময়ে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে এ আন্দোলন হয়েছে। শহিদ ভাইয়েরা মনুষ্যত্বের জন্য জীবন দিয়েছে। আন্দোলনকারীদের রক্তকে বৃথা যেতে দিবেন না। এই রক্তের বিনিময়ে আমরা একটি সৌহাদ্যের বাংলাদেশ চাই।
এসময় নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের কথা উল্লেখ করে তাঁরা বলেন, এই দেশে যেন আর কারো প্রাণ না হারায়, কারো অঙ্গহানী না হয় সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রেখে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তাঁরা আন্দোলনের ফুটেজ দেখে অপরাধিদের গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ জানান। এসময় তাঁরা ফ্যাসিস্ট সরকারের দ্রুত বিচার কামনা করে এই বাংলায় আর কখনও ফ্যাসিস্ট সরকার তৈরি হতে দিবেনা বলেও তাঁরা উল্লেখ করেন। স্মৃতিচারণ শেষে জুলাই শহিদদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করে দোয়া করা হয়। রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) আফিয়া আখতারের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান, আরএমপি’র কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, পুলিশ সুপার (এসপি) ফারজানা ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুধীজন এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে জুলাই শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের হাতে জুলাই ফাউন্ডেশনের উপহার ও জেলা পরিষদের আর্থিক অনুদান হস্তান্তর করা হয়।