সাভারের আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যার পর তাদের মরদেহ পেট্রোল ঢেলে পোড়ানোর ভয়াবহ ঘটনার বিচার প্রক্রিয়ায় নতুন মোড় নিয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা এ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট)। মামলার ১৬ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার ৮ জনকে প্রিজন ভ্যানে করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়া থানার সামনে ছয় তরুণকে গুলি করে হত্যা এবং মরদেহ পোড়ানোর অভিযোগে মামলা দায়ের হয়, যা পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গড়ায়। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যবিশিষ্ট ট্রাইব্যুনালে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
এদিন কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলেন—ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, সাবেক উপপরিদর্শক আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার।
বাকি ৮ জন আসামি এখনো পলাতক রয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এবং সাবেক উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সাহা। ট্রাইব্যুনাল পলাতক আসামিদের জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে দুজন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে।
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় চলমান ছাত্র ও জনতার আন্দোলন দমন করতে ছয় তরুণকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তাদের মরদেহ একটি পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এ ঘটনায় আরও চরম অমানবিকতা প্রকাশ পায়, যখন দেখা যায়, নিহতদের একজন তখনো জীবিত ছিলেন—তাকে জীবন্ত অবস্থায়ই পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়া হয়।
মানবতাবিরোধী এই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়। এরপর দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২ জুলাই ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গ্রহণ করে। মামলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে ৩১৩ পৃষ্ঠার প্রাথমিক প্রতিবেদন, ৬২ জন সাক্ষী, ১৬৮ পৃষ্ঠা দালিলিক প্রমাণ এবং দুটি পেনড্রাইভ।
এর আগে গত ২৮ জুলাই ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য করেছিল। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালেই প্রিজন ভ্যানে করে আটজন অভিযুক্তকে আদালতে আনা হয়।