রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকার ড্রেন থেকে উধাও হয়ে গেছে ঢাকনা। ঢাকনা চুরি হওয়ার কারণে ফুটপাতে তৈরি হয়েছে মরণফাঁদ। ঠিক এমনই এক ফাঁদে পা দিয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন রাজশাহী কলেজের এক শিক্ষার্থী। তিন দিন ধরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজশাহী কলেজের মূল ফটকের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে।
আহত ইয়াসির আরাফাত (২২) রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি নগরীর জাদুঘর মোড় এলাকায়। একজন সক্রিয় জুলাই যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত এই ছাত্র আহত হওয়ার পর তার চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ উঠেছে।ইয়াসির এখন চিকিৎসাধীন রাজশাহীর খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালে। বৃহস্পতিবার দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ঘুমাচ্ছেন, তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে।
ইয়াসিরের ভাই মো. আফ্রিদি জানান, মঙ্গলবার রাতে রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসের সামনে ড্রেনের খোলা মুখে পড়ে গিয়ে ইয়াসির মারাত্মকভাবে আহত হন। প্রথমে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে একরাত রাখার পরও পর্যাপ্ত চিকিৎসা না পেয়ে অচেতন অবস্থায় মিশন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মিশন হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. নাজমুস সাকিব জানান, রোগীর এক্স-রে করা হয়েছে, কোনো হাড় ভাঙেনি এবং শরীরের ভেতরে রক্ত জমাটও বাঁধেনি। তবে তার বুকে আঘাত লেগেছে এবং শ্বাসকষ্ট রয়েছে। সে কারণে তাকে অক্সিজেন দেওয়া হয়েছে। রাতে ঘুম না হওয়ায় এখন ঘুমাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইয়াসিরকে দেখতে হাসপাতালে যান জুলাই-৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী। তিনি জানান, মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রেডিও পদ্মায় তাঁর সঙ্গে একটি আলোচনা সভায় অংশ নেন ইয়াসির। অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসের সামনে ঢাকনাবিহীন ড্রেনে পড়ে গিয়ে তিনি গুরুতর আহত হন। মাহমুদ জামাল কাদেরী অভিযোগ করে বলেন, সিটি করপোরেশনের নগর পরিষেবার চিত্র ভয়াবহ। ঢাকনাগুলো চুরি হয়ে গেলেও সেগুলো প্রতিস্থাপন করা হয় না। ওই রাতেও সড়কবাতি জ্বলছিল না। অন্ধকারে হেঁটে যাওয়ার সময়ই এই দুর্ঘটনা ঘটে। এমন একজন ছাত্রকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভালো চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। এমনকি কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালও ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) বিকেল ৩ টার সময় রাজশাহী কলেজ এর মূল ফটক এর সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। প্রতিবাদ সমাবেশ এ অংশগ্রহণ করেন রাজশাহীর পরিবেশবাদী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক আন্দোলনকারী ও সচেতন শিক্ষার্থীবৃন্দ।গবেষণাধর্মী যুব সংগঠন ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস এর সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিকের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন রাজশাহীর সচেতন নাগরিক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ও জুলাই-৩৬ পরিষদের সদস্য সচিব নাদিম সিনা, রাজশাহীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনকর্মী ওয়ালিউর রহমান বাবু, রাজশাহী কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সহ প্রমুখ।সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘রাজশাহীতে পথচারীদের প্রতিনিয়ত ম্যানহলে পড়ে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। রাজশাহী কলেজের চারপাশের ফুটপাতে অবস্থিত ম্যানহলের ঢাকনাগুলো অনেক দিন ধরেই নেই এবং প্রতিনিয়ত এগুলো চুরি হয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে এ বিষয়ে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষকে অবগত করা হলেও তিনি এড়িয়ে গেছেন এবং শিক্ষার্থীদের চলাচলের নিরাপত্তার জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নি। শুধু ইয়াসির আরাফাত নয় অনেক শিক্ষার্থীই এ ঘটনার স্বীকার হয়েছেন। নগরজুড়ে পথচারীদের ম্যানহলে পড়ে আহত হওয়ার ঘটনা নিয়মিত ঘটছে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইলেকট্রনিক এবং প্রিন্ট মিডিয়াতে সংবাদ প্রকাশ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার পরেও নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কোন পদক্ষেপ চোখে পড়েনি’। ‘আরো কত শিক্ষার্থী ম্যানহলে পড়ে আহত হলে রাজশাহী কলেজ প্রশাসন এর ঘুম ভাঙবে বা আরো কত নগরবাসী আহত হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এর ঘুম ভাঙবে’ এই প্রশ্ন করেন প্রতিবাদে অংশগ্রহনকারীরা।প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে নগরবাসীর নাগরিক অধিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে অতিদ্রুত ম্যানহলগুলোর ঢাকনার ব্যবস্থা করা, ফুটপাতে চলাচল নিরাপদ করা এবং নগরজুড়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের জোর দাবী জানানো হয়। এবং অতিদ্রুত এসব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে নগরবাসীকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা করা হয়।উল্লেখ্য, রাজশাহী কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও জুলাইযোদ্ধা ইয়াসির আরাফাত গত ৫ আগস্ট আনুমানিক রাত সাড়ে ৮ টায় রাজশাহী কলেজ হোস্টেলের সামনের ফুটপাতের ম্যানহলে পড়ে গুরুতর আহত হন। এরপর তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হলে সেখানে সঠিক চিকিৎসা না করে অবহেলা এবং তাকে মাদকাসক্ত এবং তার পরিবারের সদস্যদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হলে তার পরিবার তাকে খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালে ভর্তি করান। এখন তার জ্ঞান ফিরেছে এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক জানেিয়ছেন তিনি গুরুতর আঘাত পেয়েছেন তবে বর্তমানে তিনি আশংকামুক্ত। সমাবেশে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু, ছাত্রনেতা নাদিম সিনা এবং উন্নয়নকর্মী আতিকুর রহমান প্রমুখ।
এ বিষয়ে কথা বলতে রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ মু. যহুর আলী এবং সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী আহমদ আল মঈনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।