অবৈধ সম্পদ মামলায় পাপিয়া দম্পতির সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৪ আগস্ট, ২০২৫, ০৫:৫৩ পিএম
অবৈধ সম্পদ মামলায় পাপিয়া দম্পতির সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড

অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমনকে সাড়ে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের পাঁচ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সাজা ভোগ করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মুহা. আবু তাহের এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় জামিনে থাকা পাপিয়া দম্পতি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।

প্রসিকিউশনের পক্ষে মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এবং আসামিপক্ষে শাখাওয়াত উল্লাহ ভূঁইয়া আদালতে লড়েন। রায়ের পর দুদকের প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, “আসামিদের অবৈধ সম্পদ অর্জন স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আদালত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ রায় দিয়েছেন।” তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী দাবি করেন, পাপিয়া ও তার স্বামী এই সাজা ইতোমধ্যে ভোগ করেছেন।

দুদকের মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ৪ আগস্ট দুদকের উপপরিচালক শাহীন আরা মমতাজ রাজধানীর সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলা দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, পাপিয়া ও তার স্বামী মফিজুর রহমান প্রায় ছয় কোটি ২৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

তদন্তে উঠে আসে, ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর থেকে ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত গুলশানের ওয়েস্টিন হোটেলের প্রেসিডেনসিয়াল ও চেয়ারম্যান স্যুটসহ ২৫টি কক্ষে অবস্থান করেন পাপিয়া। এ সময়ে হোটেল ভাড়া, খাবার, মদ, স্পা, লন্ড্রি ও মিনি বারের খরচ বাবদ তিন কোটি ২৩ লাখ টাকার বেশি পরিশোধ করেন তিনি নগদ অর্থে। সেই সময়ে প্রায় ৪০ লাখ টাকার কেনাকাটাও করেন, যার কোনো বৈধ উৎস তিনি দেখাতে পারেননি।

তাছাড়া ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে মাসে ৫০ হাজার টাকা হারে ৩০ লাখ টাকার বাসা ভাড়া পরিশোধ করেন। গাড়ির ব্যবসায় এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন এবং নরসিংদীতে একটি কার ওয়াশ সলিউশনে বিনিয়োগ করেন আরও ২০ লাখ টাকা। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে তাদের নামে জমা ছিল ৩০ লাখ টাকারও বেশি। কিন্তু এসব টাকার কোনো বৈধ উৎস খুঁজে পাওয়া যায়নি।

২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি শামীমা নূর পাপিয়া ও তার স্বামীকে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরবর্তীতে তাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫৮ লাখ টাকার বেশি নগদ অর্থ এবং ২২ লাখ টাকার একটি গাড়ি জব্দ করা হয়।

এর আগে, অস্ত্র ও মাদক আইনের মামলায় পাপিয়া ও তার স্বামীকে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর ২০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া অর্থ পাচারের মামলায় গত ২৫ মে পাপিয়াকে চার বছরের কারাদণ্ড দেয় আদালত। তবে স্বামী মফিজুর রহমান ওই মামলায় খালাস পান।

অবৈধ সম্পদের মামলার এই রায়কে দুদক কর্মকর্তারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে মনে করছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে