বাংলাদেশের নাগরিকদের ওপর নজরদারি চালাতে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কেনা বিপুল পরিমাণ যন্ত্রপাতি ও এর ব্যবহার নিয়ে তদন্তে নেমেছে অন্তর্বর্তী সরকার। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেবেন প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। কমিটি খতিয়ে দেখবে—নজরদারি যন্ত্রপাতি কোথা থেকে এবং কত দামে কেনা হয়েছে, কীভাবে এগুলো ব্যবহার করা হয়েছে, এবং এর পেছনে কারা জড়িত ছিল। প্রেস সচিবের ভাষায়, এসব যন্ত্রের দাম নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য রয়েছে—কেউ বলছেন প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার, আবার কেউ বলছেন ২০০ মিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, উল্লেখযোগ্য অংশ ইসরায়েল থেকে কেনা হয়েছিল।
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউট ও একটি জাতীয় ইংরেজি দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পুলিশ, র্যাব ও ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) যৌথভাবে এক হাজার ১৩৫ কোটি টাকার বেশি মূল্যের নজরদারি সরঞ্জাম সংগ্রহ করে। এনটিএমসি প্রতিষ্ঠা করে "ইন্টিগ্রেটেড ল'ফুল ইন্টারসেপশন সিস্টেম" (আইএলআইএস) নামের এমন একটি অবকাঠামো, যা দেশের সব নাগরিকের ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ তথ্য রিয়েল-টাইমে নজরদারি, বিশ্লেষণ ও সংরক্ষণ করতে সক্ষম।
প্রেস সচিব অভিযোগ করেন, বিগত ‘স্বৈরাচারী সরকার’ এই সরঞ্জাম ব্যবহার করে নাগরিকদের বাকস্বাধীনতা ও সংবিধানপ্রদত্ত গোপনীয়তার অধিকার খর্ব করেছে। পাশাপাশি পুলিশের জন্য কেনা মারণাস্ত্র কীভাবে কেনা হয়েছিল ও ব্যবহৃত হয়েছে, সেটিও আলাদা তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে সংস্কার কমিশনের ৩৬৭টি সুপারিশ নিয়ে অগ্রগতি আলোচনা হয়। এর মধ্যে ৩৭টি বাস্তবায়ন সম্পন্ন হয়েছে, ১৪টি আংশিক বাস্তবায়িত এবং বাকিগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। শ্রম, নারীবিষয়ক, স্বাস্থ্য, স্থানীয় সরকার ও গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন খাতে আশু বাস্তবায়নযোগ্য সুপারিশগুলোতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা।
সরকারি কেনাকাটা সংক্রান্ত আইনে পরিবর্তনের প্রস্তাবও আলোচনায় আসে। খসড়া প্রস্তাবটি সব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে এবং দ্রুত অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদে উপস্থাপন করা হবে।