বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। প্রতিষ্ঠার পর থেকে দলটি দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন, উন্নয়ন অগ্রযাত্রা এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় রেখেছে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা। বিএনপি শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয় বরং এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসের অংশ। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের যিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নামে দলটি ১৯৭৮ সালের (১ সেপ্টেম্বর) প্রতিষ্ঠা করেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর রাষ্ট্র পরিচালনার অগ্রযাত্রা নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মুখোমুখি হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা একদলীয় শাসনব্যবস্থা অর্থনৈতিক সংকট এবং জনমনে হতাশার প্রেক্ষাপটে উদ্ভূত হয় বিএনপি। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য গণমানুষের দল গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তাই তিনি ১৯৭৮ সালের (১ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গঠনের ঘোষণা দেন। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ ছিল বিএনপির মূল দর্শন, যা দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জনগণের বিশ্বাসকে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দেয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
(বিএনপি) মূলনীতি হলো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ, বহুদলীয় গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক সমতা, স্বনির্ভরতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার। প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই বিএনপি বিশ্বাস করে যে রাষ্ট্রের শক্তি জনগণের হাতে এবং গণতন্ত্রই হতে পারে দেশের টেকসই অগ্রগতির প্রধান ভিত্তি। দলটির অন্যতম অবদান হলো বহুদলীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তন। ১৯৭৫ সালে দেশে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের পর রাজনৈতিক স্বাধীনতা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ফিরিয়ে দেন এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেন। এই কারণে বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেশের রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে আসতেছে। ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলটি ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর দলের নেতৃত্বে আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি বাংলাদেশে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী উপহার দেয়। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনে বিএনপি ঐতিহাসিক ভূমিকা রাখে। ১৯৯১ সালের গণভোটে জনগণের রায়ে রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় পরিবর্তন হয় যেটা বাংলদেশের ইতিহাসে নজির।
বিএনপি পরবর্তী সময়ে আরও দুইবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। প্রতিবারই দলটি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, শিক্ষা, যোগাযোগ এবং বেসরকারি খাতকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেবল স্মৃতিচারণের দিন নয়, বরং এটি নতুন অঙ্গীকার ও কর্মসূচির দিন। এই দিনে বিএনপি নেতাকর্মীরা শপথ নেন গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) রাজনৈতিক যাত্রা কখনোই সহজ ছিল না। সামরিক শাসন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক শক্তির সাথে সংঘাত করতে করতে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে সর্বদা অগ্রণী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ২০০৭ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বিএনপি নেতৃত্ব কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। বাংলাদেশ আপোষহীন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ দলের শীর্ষ নেতারা নানান রকমের হয়রানির শিকার হন। এরপর থেকেও বিএনপি গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর তাৎপর্য নিয়ে বগুড়া শহর যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৌরভ হাসান শিবলু বলেন, বিএনপি কেবল একটি রাজনৈতিক দল নয়, এটি গণমানুষের মুক্তির প্রতীক। আমাদের আপোষহীন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে দীর্ঘ সময় নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেছেন। আজও আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে আমরা দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছি। সদ্য বিদায়ী স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছে, দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ধ্বংস করেছে। বিএনপি বিশ্বাস করে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, তাহলেই দেশ একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত হবে। তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়ে বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে থেকে আমাদের শপথ হোক গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা, জনগণের অধিকার ফিরিয়ে আনা এবং শহীদ রাষ্ট্রপতির স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এই সংগ্রামে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। সকল ভেদাভেদ ভুলে দেশের স্বার্থে এগিয়ে আসতে হবে।
বিএনপি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সাধারণ মানুষরা জানান, দলটি দেশের গণতন্ত্র রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। বিএনপি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও দেশের উন্নয়নে আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।নতুন প্রজন্মকে রাজনীতিতে যুক্ত করবে এবং তাদের জন্য গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের রূপরেখা দিবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে সাধারণ মানুষ ভুগছে তাই জনগণ প্রত্যাশা করে বিএনপি আবারও গণতান্ত্রিক ধারার রাজনীতিকে শক্তিশালী করবে। অনেকে দলটির ত্যাগ ও সংগ্রামকে সম্মান জানিয়ে ভবিষ্যতে ইতিবাচক পরিবর্তনের প্রত্যাশা করছে।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আজ যে অবস্থায় দাঁড়িয়েছে, তা এক দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। ইতিহাসের নানা বাঁক পেরিয়ে বিএনপি দেশের রাজনৈতিক মঞ্চে এখনও অন্যতম প্রধান শক্তি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।