২৮সেপ্টেম্বর (রোববার) বেল ষষ্ঠী দেবী বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহা উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। উপজেলায় ১৩৭ টি মন্ডপে শারদীয় দূর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। মৌলভীবাজারের রাজনগরের পাঁচগাঁও মন্ডপে অনেক আলৌকিক ঘটনার নজীর স্থাপন করে লালবর্ণা হয়ে দুর্গাদেবী আবির্ভূত হন। সর্বত্র ভগবতী গায়ে বর্ণ অতসী পুস্পের ন্যায় থাকে কিন্তুু পাচঁগাও সঞ্জয় দাসের বাড়ির মন্ডপে দুর্গাদেবী লাল বর্ণা হয়ে পুজিতা হন। প্রতি বছর ভক্তদের ঢল নামে এমন্ডপে। দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা পরিবার পরিজন নিয়ে দেবীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আসেন পাঁচগাও মন্ডপে। যে কারনে বিখ্যাত পাঁচগাঁও পুজা মন্ডপ জনশ্রুতি আছে প্রায় তিনশ বছর পূর্বে সর্বানন্দ দাশ (সঞ্জয় দাসের পূর্ব পুরুষ) তৎকালীন সরকারের মুন্সী পদবি প্রাপ্ত কর্ম স্থল আসামের শ্বিবসাগর জেলার বাড়িতে দুর্গাপুজার সময় তার স্ত্রী ও কর্মচারীগনকে নিয়ে কামাখ্যাধামে কুমারী পুজা করার মনস্থ করেন। মন্দিরের সেবায়েতের সহায়তায় সর্বানন্দ দাস পঞ্চম বর্ষীয়া কুমারী নির্বাচন করেন। মহাষ্টমীর দিনে কুমারীকে ভগবতীর জ্ঞানে সুদীর্ঘ ছয় ঘন্টা পুজাঁ করার শেষে প্রণাম করার সময় সর্বানন্দ দাস এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখেন, কুমারীর গায়ের বর্ণ পরিবর্তন হয়ে লালবর্ণ ধারন করেছেন। এই দৃশ্য অবলোকন করার পর ভাবে গদগদ চিত্তে মাকে জিজ্ঞাসা করেন, মা’ আমার পুজা সুপ্রসন্ন হয়েছে কি? উত্তরে ভগবতী বলেন, হ্যাঁ তোর পূজা সিদ্ধ হয়েছে। এই বর্ণে তোর গ্রামের বাড়ি পাচঁগাও এর পূজা মন্ডপে আর্ভিভূত হয়েছিলাম। এখন হইতে ভগবতীকে লালবর্ণে পূজা করবে। তখন সর্বানন্দ মাকে আবারও প্রশ্ন করলেন, তুমি যে এই রুপে আমার বাড়িতে আবির্ভূত হয়োছিলে তাহার প্রমান কী? উত্তরে কুমারী দেবী বলেলন, তোর দুর্গা মন্ডপের বেড়ার উপর হাতের ছাপ রেখে এসেয়াছি। তোর পূজায় আমি খুবই সন্তুষ্ট হইয়াছি,তুই আমার কাছে বর প্রার্থনা কর। তখন সর্বানন্দ দাস বলেন,মা তুমি যদি একান্তই বর দিতে চাও, তবে আমি এই বরই প্রার্থনা করি যে, আমার স্থাপিত পাঁচগাঁও এর দূর্গা মন্ডপে তুমি স্থায়ীভাবে অধিষ্ঠিতা থাকিবে। ভগবতী তাঁহার নিজের মাথায় পরিহিত সোনার সিঁথি খুলিয়া সর্বানন্দের হাতে দেন এবং প্রতি বৎসর মহাস্নানের সময় এই সিঁথির দ্বারা স্নান করার নির্দেশ দেন। মাকে প্রণাম করে বাড়িতে আসিবার পর অনুসন্ধান করে দেখেন যে, সত্যই বেড়ার উপর দেবীর হাতের ছাপ রয়েছে। পরবর্তী বছর সর্বানন্দ দাস নিজ বাড়ি পাঁচগাঁও শারদীয় পূজার আয়োজন করেন। কামাখ্যাধামে দেবীর আদেশ অনুযায়ী মার্তৃমূর্তিকে কুমারী গায়ের সেই লাল বর্ণের সহিত সাদৃশ্য রেখে লাল বর্ণে রঞ্জিত করেন। লাল বর্ণ দেওয়ায় গ্রামবাসী সর্বানন্দের ঞ্জাতিবর্গ, গুরু পুরোহিত, কেউই পূজায় যোগদান করবেননা বলে জানিয়ে দেন। সেই বছর ষষ্টীর দিন রাত্রি পর্যন্ত কেউ আসে নাই। পুরোহিতের অভাবে দেবীর বোধন সম্পন্ন হলো না। সর্বানন্দ পাগলের ন্যায় মা দুর্গাকে ডাকতে লাগলেন। রাত্রি শেষ প্রায়, এমন সময় এক অলৌকিক কান্ড ,ঘঠে গেল। গুরু পুরোহিত,জ্ঞাতিবর্গ ও গ্রামবাসী সকলে এসে জানালেন তাড়া স্বপ্নাদেশ পাইয়াছেন যে, ভগবতী এ লাল বর্ণে পুজিতা হইবেন। তা সর্বানন্দ দাসের জ্ঞাতি পাঁচগাওয়ের বাড়িতেই। তাই সর্বানন্দ দাসের পরবর্তী বংশধর সঞ্জয় দাসের সার্বিক তত্বাবধানে তার বাড়িতেই লাল বর্ণে দূর্গাপুজা পালিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার (চাঁদনীঘাট) থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার ও রাজনগর উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার উত্তরে পাঁচগাঁও গ্রামে স্বর্গীয় সর্বানন্দ দাস (বর্তমান সঞ্জয় দাসের) বাড়ি।
এবার এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়রে ব্যক্তিগত ৫৭টি ও সার্বজনীন ৮০টি মোট ১৩৭টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবে এ উপলক্ষে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে প্রতিটি পুজামন্ডপ ও আশপাশের এলাকা।
এদিকে দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা পালন করতে পুজা উদজ্জাপন পরিষদ উপজেলা বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পাটি (এসিপি) নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করেছে।
পুলিশ প্রশাসন ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। রাজনগর থানা অফিসার ইনচার্জ মোবারক হোসেন খান বলেন, পূজায় প্রত্যেক মন্ডপে নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। টহলে থাকবে সেনাবাহিনী, র্যাব বিজেপি ও পুলিশের স্টাইকিং ফোস এবং মন্ডপের নিজস্ব সেচ্ছাসেবক বাহিনী।
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা এবারের দুর্গা পূজায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ মন্ডপে সিসি ক্যামেরার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। তিনি আরো জানান সরকারি ভাবে প্রতিটি পূজা মন্ডপে ৫শ’ কেজি করে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চালু রাখার জন্য পল্লী বিদুৎ অফিসকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ রাজনগর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক শ্রীপদ বৈদ্য ও পুজা উদযাপন ফ্রন্টের আহবায়ক রুপক চন্দ্র দেব বলেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সার্বক্ষনিক সহযোগিতায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে প্রতি বছরের ন্যায় উৎসব মুখর পরিবেশে পালন হবে এবারের শারদীয় দুর্গাপূজা।
উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভসপতি অসিত দেব বলেন, উপজেলা বিএনপি জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পাটি (এনসিপি) নেতৃবৃন্দ আমাদের সাথে মতবিনিময় করেছি তারা আসস্থ করেছেন এবার অধিকতর আনন্দ উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপন হবে।
হিন্দু, বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ দেব বলেন, শুভ শারদীয় দুর্গাপুজা উপলক্ষে সামগ্রীক নিরাপত্তা অতান্ত লক্ষনীয়, আমরা অন্তরবর্তী সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানাই। সকল জাতি গোষ্টি সমপ্রদায়ের সহযোগিতা আন্তরিকতায় আমরা অভিভুত। এভাবে সর্বদা একে অন্যে পারস্পরিক ভাতৃত্বের মাধ্যমে একটি কল্যান মুলক সুশাসনের প্রতিস্টা লাভ করুক। গড়ে উঠুক অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সকল সমপ্রদায়ের আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপিত হোক শারদীয় দুর্গাপূজা।