ভক্তি, উৎসব ও নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে সিলেটে উদযাপিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা

এফএনএস (সিলেট): | প্রকাশ: ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:৪০ পিএম
ভক্তি, উৎসব ও নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্য দিয়ে সিলেটে উদযাপিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজা

সিলেট জেলা ও মহানগরীতে আজ শারদীয় দুর্গাপূজার মহাঅষ্টমী উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হচ্ছে। ভক্তি ও উৎসাহের সঙ্গে কুমারী পূজার মাধ্যমে দেবী দুর্গার পবিত্র শক্তির ছোঁয়া ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভোর থেকেই শিশুকন্যাদের দেবীর রূপে পূজা করার মাধ্যমে ভক্তরা আশীর্বাদ গ্রহণ করছেন। ঢাক-ঢোলের শব্দ ও শঙ্খধ্বনিতে সিলেট শহর পূজার রঙে সেজে উঠেছে।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, ২০২৫ সালে সিলেট জেলায় মোট ৬১৮টি দুর্গাপূজা মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেট মহানগরীতে সার্বজনীন ও পারিবারিক মিলিয়ে মোট ১৬২টি মণ্ডপ রয়েছে। মহানগরীতে ১৪২টি সার্বজনীন মণ্ডপ এবং ২০টি পারিবারিক মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জেলার বিভিন্ন উপজেলার মণ্ডপগুলোতে ষষ্ঠীপূজার মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে, যা দশমীর বিসর্জনের মাধ্যমে শেষ হবে।

এবারের দুর্গাপূজায় প্রথমবারের মতো সিলেটে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়েছে। দক্ষিণ সুরমার জৈনপুরের শ্রী শ্রী মহালক্ষ্ণী ভৈরবী গ্রীবা মহাপীঠে মহাঅষ্টমীর দিন, মঙ্গলবার দুপুরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মহাপীঠের সভাপতি শিবব্রত ভৌমিক চন্দন ও সাধারণ সম্পাদক জনার্দন চক্রবর্তী মিন্টু জানান, সর্বস্তরের ভক্তবৃন্দের অংশগ্রহণে শান্তিপূর্ণভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হওয়ায় তাঁরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

শহরের কালিবাড়ি, বাগবাড়ি ও দাড়িয়াপাড়া এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মৃৎশিল্পীদের দক্ষ হাতে তৈরি দুর্গা প্রতিমাগুলো দর্শনীয় রূপ পেয়েছে। প্রতিটি মণ্ডপ সাজসজ্জায় ঝলমল করছে, যেখানে গেট, প্রবেশপথ ও প্যান্ডেল লাইটিংয়ে সজ্জিত করা হয়েছে। বাগবাড়ির বাসিন্দা স্বপন রায় বলেন, “প্রতি বছর পূজার আগে পরিবারের জন্য নতুন কাপড় কেনা হয়। এবছরও নতুন কাপড় কিনেছি সবাইকে নতুন করে সাজানোর জন্য।”

সিলেট জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রঞ্জন ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, “শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ পূজা আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি ছিল এবং প্রত্যাশা অনুযায়ী এবারের দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হবে।” তিনি আরও বলেন, দুর্গাপূজার শুরু হয় মহালয়ার দিন থেকে। এ দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে চণ্ডীপাঠ, মঙ্গলঘট স্থাপন এবং ঢাক-ঢোল ও শঙ্খ বাজিয়ে দেবীকে মর্ত্যে আহ্বান জানানো হয়।


হিন্দু শাস্ত্রমতে, মহালয়া, বোধন ও সন্ধিপূজা-এই তিন পর্ব মিলে দুর্গাপূজার পূর্ণতা আসে। সাধারণত আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষেই শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। এবারের পঞ্জিকা অনুযায়ী, মহালয়ার সপ্তম দিন ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ষষ্ঠীপূজা শুরু হয়ে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গাপূজা চলবে। ২৯ সেপ্টেম্বর সপ্তমী, ৩০ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী, ১ অক্টোবর নবমী এবং ২ অক্টোবর বৃহস্পতিবার দশমীর সন্ধ্যায় বিসর্জনের মাধ্যমে পূজার সমাপ্তি হবে।

সাধারণত দেবী দুর্গার আগমন হয় গজে, অর্থাৎ হাতির পিঠে। গজে আগমন কৃষির শ্যামলতা এবং ফসলের সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। দশমীতে দেবী মর্ত্যলোক ত্যাগ করবেন দোলায় চড়ে। এতে মহামারি বা রোগের সংকট কাটিয়ে ওঠার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

নিরাপত্তার ব্যাপারেও সিলেট প্রশাসন কঠোর অবস্থানে রয়েছে। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, “এবার সিলেটে পূজার সময় পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। পূজার সার্বিক নিরাপত্তায় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও হটলাইন নম্বর চালু রাখা হয়েছে। পাড়া-মহল্লায় পরিবেশ রক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ড্রোন ও সোশ্যাল মিডিয়া মনিটরিংয়ে নিয়োজিত রয়েছে পুলিশের সাইবার টিম।”

শারদীয় দুর্গাপূজা শুধু ধর্মীয় উৎসবই নয়, এটি সিলেটের সামাজিক ঐক্য, সংস্কৃতি ও মানবিক সম্প্রীতির মহোৎসব। এই উৎসবে সকল ধর্ম ও বর্ণের মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে আনন্দ ভাগাভাগি করেন এবং দেশ তথা সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেন।

এবারের দুর্গাপূজায় সিলেটবাসীর আশা ও প্রত্যাশা পূর্ণ হবে শান্তি ও সৌহার্দ্যরে মাধ্যমে। নিরাপত্তার সর্বোচ্চ ব্যবস্থাসহ প্রশাসন, পূজা কমিটি ও স্থানীয় মানুষ একসঙ্গে মিলেমিশে সফলভাবে পূজা উদযাপন করছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে