হামলা, হেনস্তা ও বিদ্রুপে আতঙ্ক ও মানসিক চাপে পুলিশ সদস্যরা

এফএনএস এক্সক্লুসিভ | প্রকাশ: ২৯ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:১৫ এএম
হামলা, হেনস্তা ও বিদ্রুপে আতঙ্ক ও মানসিক চাপে পুলিশ সদস্যরা

দেশে বেড়েই চলেছে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর প্রবণতা। আসামি ধরতে গিয়ে একের পর টকে হেনস্তা ও মারধরেরও শিকারের ঘটনায় পুলিশের মনোবল ভাঙছে। বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে পুলিশ বাহিনীর অনেক সদস্যই হামলা, হেনস্তা ও বিদ্রুপের ভয়ে ইউনিফর্ম পরে যেখানে-সেখানে দায়িত্ব পালনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। কারণ দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ১৪ মাস পরও পুলিশ সদস্যরা হামলা, হেনস্তা ও আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। বরং রাজধানী থেকে শুরু করে বিভাগীয় শহর ও প্রত্যন্ত এলাকায় পুলিশ সদস্যদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে। পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাই, শটগান, ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা হতাহত হওয়ায় অনেকের মধ্যে আতঙ্ক ও মানসিক চাপ দেখা দিয়েছে। পুলিশ বাহিনী সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি বছরে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত গত ৯ মাসে পুলিশের ওপর হামলা, হেনস্তার ঘটনায় ৪৬২টি মামলা হয়েছে। যদিও মামলার চেয়ে প্রকৃত ঘটনার সংখ্যা আরো বেশি। কারণ অনেকে বাহিনী ও নিজের আত্মসম্মানের কথা ভেবে ছোটোখাটো হামলার শিকার হলেও তা নিয়ে আইনি প্রক্রিয়ায় যাননি। তাছাড়া গত কয়েক মাসে একাধিক এলাকায় টহলরত বা দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় পুলিশের ওপর হঠাৎ আক্রমণ হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ওই হামলার পেছনে ছিল ডাকাত চক্র, কিছু ক্ষেত্রে সন্ত্রাসী বা রাজনৈতিক সহিংসতায় যুক্ত ব্যক্তিরা। এমনকি অটোরিকশাচালকদের হাতেও পুলিশ মারধর ও হেনস্তার শিকার হয়েছে। ওসব টার্গেট করা হামলায় পুলিশ বাহিনীর ভেতরে উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। একের পর এক ঘটনায় পুলিশের মনোবল নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। আর এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্রের সার্বিক সব শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ভেঙ্গে পড়বে।

সূত্র জানায়, কৌশলগত পুনর্বিন্যাস ছাড়া পুলিশের ওপর হামলা নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে না। মূলত পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়ায় বারবার হামলা হচ্ছে। কিন্তু পুলিশের মনোবল ফেরাতে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও সেগুলোর দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। অথচ সমপ্রতি ‘মব’ সৃষ্টি করে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ছে ওসব ঘটনার কিছু ভিডিও। তারপরও হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। তাতে পুলিশ নিজেরাই এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। সেজন্যই তারা টহল দিতে কিংবা তল্লাশি চালাতে অনিচ্ছুক হয়ে পড়েছে। কারণ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা শুধু বাহিনীর মনোবলেই নয়, সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতিতেও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পুলিশের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি তাদের মানসিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ বাড়ানো জরুরি। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে আধুনিক সুরক্ষা সরঞ্জাম, বডিক্যাম ও দ্রুত ব্যাকআপ ব্যবস্থার উন্নয়ন করলে হামলার ঝুঁকি অনেকটা কমানো সম্ভব।

সূত্র আরো জানায়, দেশেল বিদ্যমান অবস্থায় অনেক পুলিশ সদস্যের মধ্যে মানসিক চাপ, ক্লানি— ও হতাশা বাড়ছে। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি এবং সামাজিক সমালোচনার মুখে অনেকেই পেশাগত অনুপ্রেরণা হারাচ্ছে। পুলিশ সদস্যের ওপর হামলার ঘটনায় বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের মানসিক চাপ ও নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে। আর নিয়মিত ঝুঁকি মোকাবেলা করেও যখন হামলার ঘটনা বেড়েই চলেছে, তখন মনোবলে প্রভাব পড়াই স্বাভাবিক। কারণ বর্তমানে অপরাধীরা অনেক বেশি সংগঠিত। 

এদিকে পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি (মিডিয়া) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন জানান, দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা ও হেনন্তার ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দনীয়। তবু বাংলাদেশ পুলিশ মনোবল অটুট রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় বদ্ধপরিকর। ওসব ঘটনার তদন্ত চলছে। দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশ জনগণের আস্থা ও নিরাপত্তা রক্ষায় পেশাদারিত্ব ও সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে