গ্রেপ্তার ৩ , আরও ২ জনকে গ্রেফতারে গড়িমসি

রাজশাহীতে ডা. কাজেম আলী খুনের ঘটনায় ৬ আসামি শনাক্ত

এম এম মামুন; রাজশাহী | প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:৩৫ পিএম
রাজশাহীতে ডা. কাজেম আলী খুনের ঘটনায় ৬ আসামি শনাক্ত
রাজশাহীর প্রখ্যাত চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. কাজেম আলী খুনের ঘটনায় প্রাথমিকভাবে ৬ জন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন তিনজন। তবে মূল অভিযুক্ত মোস্তফাসহ আরও দুজনকে গ্রেফতারে গড়িমসি করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বেলা ১১টায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজের কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। বৈষম্য বিরোধী চিকিৎসক ফোরাম, রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপি পন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ও রাজশাহীর সভাপতি প্রফেসর ডা. ওয়াসিম হোসেন, এনডিএফ-এর কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির এমপি প্রার্থী প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, এনডিএফ রাজশাহীর সভাপতি ডা. রেজাউল ইসলাম, সহ. সভাপতি ডা. এম মুর্শেদ জামান মিঞা, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. এএসএম আব্দুল্লাহ, শহীদ ডা. কাজেম স্মৃতি পরিষদের সভাপতি ডা. মশিউর রহমান, ডা. কাজেম আলীর ব্যাচমেট ডা. জাহাঙ্গীর আলম ও ডা. গোলাম রব্বানিসহ অন্যান্য চিকিৎসকরা উপস্থিত ছিলেন। লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ডা. মশিউর রহমান। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ২৯ অক্টেবর ডা. কাজেম আলীকে নৃশংসভাবে খুন করা হয়। পরদিন তার স্ত্রী রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। খুনের দুবছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত মামলার উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল এর সিডিএআর পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে ৬ জন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করা গেছে। তাদের মধ্যে গাড়ির ড্রাইভারসহ মোট তিনজনকে গ্রেফতার করা হলেও স্পটের মূল খুনি মোস্তফাসহ অন্য দুইজনকে গ্রেফতারে গড়িমসি করছে পুলিশ। ডা. মশিউর রহমান আরও বলেন, আমরা আশঙ্কা করছি এ খুনের কোনো সুষ্ঠু বিচার পাব কি না। কারণ দুবছর সময়কাল অতিবাহিত হলেও মূল খুনিসহ অধিকাংশ আসামি এখনো গ্রেফতার হয়নি। খুনিদের গ্রেফতার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। এরপর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ডা. কাজেম আলীর ব্যাচমেট ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, মহিদুল ইসলাম মোস্তফা, পেশায় বাবুর্চি। নগরীর শিল্পিপাড়ায় তার বাসা। তিনি মূল অভিযুক্ত। লেনদি হচ্ছে বিচার প্রক্রিয়া। তবে গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে। আমরা বিচার চাই। আমাদের ধারণা ছিল, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড হবে। দুজন আসামি স্বীকারোক্তি দিয়েছি। ১৬৪ ধারায় শাহাজাদা নামে আরেকজন স্বীকারোক্তি দিয়েছে। সে বলেছে, আমি ছিলাম এবং মোস্তফা ছিল। এটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছিল। শাহাজাদা বলেছে, আমরা ব্যবহার হয়েছি। নেপথ্যে কিছু আছে কি না জানি না- সে বলেছে। এ সময় এনডিএফ রাজশাহীর সহ. সভাপতি ডা. এম মুর্শেদ জামান মিঞা বলেন, ঘটনাটি ইলেকশনের আগে হয়। প্যানিক তৈরির জন্য এটা করে এবং ম্যানুয়ালি করে। পুলিশ তখন আমাদের বলে, পারসোনালি নিরাপত্তা নিয়ে বেড়ান। তখন আমাদের ফোন ট্র্যাক হচ্ছিল। কিলিং লিস্টে আমাদেরও নাম ছিল। মানে কে মারবে? পুলিশ থেকে বলা হয়, একটি টিম ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পরে জানলাম, ওই টিমে তৎকালীন আরএমপির বিজয় বসাক ও উৎপল কুমার ছিল। উৎপল ওই সময়ের সিসিটিভি ক্যামেরা ডিলিট করে দিয়েছে। ডা. কাজেম আলীর খুনিরা এখন আমাদের আশপাশে আছে, যে কোনো তারা বের হয়ে আসবে এবং খুন করবে। আমরা ভীত। এটা ষড়যন্ত্রের অংশ। জামায়াতের রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমির প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, শহীদ ডা. কাজেম আলী হত্যাকাণ্ড অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ছিল। ওইদিন আরেকজন পল্লী চিকিৎসক খুন করা হয়। খুনের লিস্টে আরও কয়েকজনের নাম ছিল। বিগত সরকারের আমলে অসংখ্য গুম-খুন হয়েছে। আনয়াঘরের সৃষ্টি করা হয়েছে। আমাদের ব্যারিস্টার আরমানকে ৮ বছর, ব্রিগেডিয়ার আজমিকে প্রায় এক যুগ গুম রাখা হয়েছে। এরকম অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। সিলেটের ইলিয়াসের এখনো খোঁজ পাইনি। অনেক মামলা হামলা-হয়েছে। গায়েবি মামলা হয়েছে। যেগুলোর সঙ্গে দূরতম সম্পর্ক নেই, সেই মামলায় আমাদের জড়ানো হয়েছিল। আমরা চাই বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হোক, ডা. কাজেম খুনের বিচার চাই। ড্যাবের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সভাপতি প্রফেসর ডা. ওয়াসিম হোসেন বলেন, রাজনৈতিক বিষয় বাদই দেন, ডা. কাজেম বাংলাদেশের একজন নাগরিক তো, তাকে হত্যা করা হয়েছে, তাকে চাকু দিয়ে হত্য করা হয়েছে এটা তো মিথ্যা না। সুতরাং তার খুনের বিচার হওয়া উচিত। আসামি ধরছে না, তো চার্জশিট দেক পুলিশ, বিচার কার্যক্রম চলুক। তাকে ধরে আনুক, মুখোশ উন্মোচন করুক।
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে