নীলফামারীর পিলার বাজারে শীতের পুর্বেই বসেছে জলপাই হাট

এফএনএস (ওবায়দুল ইসলাম; সৈয়দপুর, নীলফামারী) : | প্রকাশ: ৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০৩:০০ পিএম
নীলফামারীর পিলার বাজারে শীতের পুর্বেই বসেছে জলপাই হাট

পৌষ মাঘ মিলে শীতকাল। আর সাধারণত শীতকালে জলপাই পাওয়া যায়। এখন চলছে হেমন্তকাল তবে হেমন্তেই নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরসহ বিভিন্ন বাজারে মিলছে জলপাই।বাজারে যে জলপাই পাওয়া যাচ্ছে তা কিন্তু অপরিপক্ক। পরিপক্ক জলপাই পেতে এখনো কয়েক মাস সময় গুনতে হবে। শীত আসার পুর্বেই নীলফামারীর বিভিন্ন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে জলপাই। এটি টক হলেও মেয়েদের কাছে অত্যন্ত একটি জনপ্রিয় ফল। পুরুষদের চেয়েনারীদের এটি বেশি পছন্দনীয়। এ ফল সাধারণত বছরে এক বার ফলে।

আশির দশকে জলপাই গাছ তেমন একটা চোখে পড়তো না। হঠাৎ বাঁশ ঝাড়ে,জঙ্গলে বা কোন সৌখিন মানুষের বাসায় জলপাই গাছ দেখা যেত। দশ গ্রামের ছেলে মেয়েরা যেত ওই জলপাই গাছের তলায়। তাদের উদ্দেশ্য যেমন করেই হোক জলপাই খেতে হবে।

আজ কৃষি ও বনবিভাগ থেকেও পাওয়া যাচ্ছে জলপাই গাছের বীজ বা চারা। তাই এখন প্রায়ই স্থানে চোখে পড়ে জলপাই গাছ। আবার কোন কোন গৃহস্থ জলপাই বাগান করছে।

জলপাই কেউ কাঁচায় লবন দিয়ে খায়। আবার কেউ সিদ্ধ করে আচার তৈরি করে। ওই আচার গুড় ও চিনি দিলে মিষ্টি হয়। আবার মরিচের গুড়া দিলে তা ঝাল হয়। আর এতে কিছু না দিলে তা টক হয়।

বাসার সৌখিন নারীরা জলপাই আচার বিভিন্ন স্বাদের তৈরি করে। পরে তা কাচের বড় ভৌরম বা পাত্রে সরিষার তেল দিয়ে রেখে দেয়। যা সারা বছর মন চাইলে খেতে পারেন। সাধারণত জলপাই,তেঁতুল,বড়াই,কামরাঙ্গা এ ফলগুলো কেউ সামনে খেলে জিহবায় পানি আসে। তার মধ্যে জলপাই অন্যতম।

এ ব্যাপারে শাহিনা বেগম নামে এক আদর্শ গৃহিনী বলেন,আমি প্রতি বছর জলপাই আচার তৈরি করি। এটি তৈরি করতে প্রথমে জলপাইগুলো পরিস্কার পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নেই। তারপর পাত্রে দিয়ে সিদ্ধ  করে পানি ঝরিয়ে নেই। এরপর জলপাইগুলো ঝাকাঝাকি করে আলগা করি।  তারপর একটি পাত্রে লবণ,পাঁচফোড়ন,শুকনা মরিচের গুঁড়া,হলুদ গুঁড়া,বিট লবণ,ভিনেগার নিয়ে চটকানো জলপাই ভালোভাবে মিশিয়ে নেই। মাখানো জলপাই কয়েকঘণ্টা রোদে শুকিয়ে নেই। তারপর একটি পাত্রে জলপাই ভরে তাতে সরিষা তেল দিয়ে ঢাকনা বন্ধ করে রাখি। দীর্ঘদিন পাত্রে এটি সংরক্ষণ করা যায়।

গতকাল সৈয়দপুর বাজারে এক কেজি কাঁচা জলপাই বিক্রি করতে দেখা গেছে ২শ টাকা। অথচ ওই জলপাই পাশের বিন্যাকুড়ি বাজারে বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ টাকা কেজি দরে। দামের এ তারতম্যের কোন জবাব নেই বিক্রেতার কাছে।

নীলফামারী সদরের পিলার বাজারে জলপাই ক্রয় বিক্রয় আড়ৎ চালু করা হয়েছে। আব্দুর রাজ্জাক নামে এক তরুণ ব্যবসায়ি ওই আড়ৎ খুলেছেন।

তিনি বলেন,জলপাই আড়ৎ আমি খুলেছি গত বছর থেকে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় এখন জলপাই গাছ রয়েছে। ওই সকল এলাকা থেকে জলপাই সংগ্রহ করা হয়। আজ আমার আড়তে বেশ কয়েক ভ্যান জলপাই এসেছে। আমি প্রতি কেজি জলপাই ক্রয় করছি ১৫ টাকা থেকে ১৬ টাকা পর্যন্ত। প্রতি মন জলপাই ক্রয় করছি ৬৪০ টাকা দরে। আমার আড়তে প্রতিদিন ১০ টন পর্যন্ত জলপাই আসে বিভিন্ন এলাকা থেকে।

গ্রামাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করে ওই জলপাই আমি ঢাকায় বিক্রি করে থাকি। অনেক সময় চট্টগ্রামেও বিক্রি করি। নীলফামারী জেলায় জলপাই এর চাহিদা না থাকায় এগুলো বাইরের জেলায় বিক্রি করা হয়।

জলঢাকা,ডিমলা,ডোমার,কিশোরগঞ্জ,গনেশ,মাগুড়া,দলিরাম,বড়ভিটা,ট্যাংগনমারীসহ জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে জলপাই সংগ্রহ করে তা পিলার বাজারে নিয়ে আসা হয়। ওইদিন এসেছে ৪ ভ্যান জলপাই। প্রতি ভ্যানে ছিল ৪ থেকে ৫ বস্তা জলপাই। ভয়ান চালক শহিদার রহমান,সাইদুল ইসলাম ও বেলাল হোসেন জানান,প্রতি বছর আমরা জলপাই ব্যবসা করি। বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করে তা নিয়ে আসি নীলফামারী সদরের পিলার বাজারে। এখানে আব্দুর রাজ্জাকের আড়তে এনে নগদে বিক্রি করে থাকি। সকল খরচ বাদে বেশ লাভ থাকে হাতে। বছরে দুই মাস এ ব্যবসা চলে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে