স্থিতিশীলতার ভেতর লুকানো ঝুঁকি

এফএনএস | প্রকাশ: ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:০৫ পিএম
স্থিতিশীলতার ভেতর লুকানো ঝুঁকি

বাংলাদেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক জটিল বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে-একদিকে স্থিতিশীলতা ও ইতিবাচক প্রবৃদ্ধির ধারা, অন্যদিকে ভেতরে লুকানো অনিশ্চয়তার ছায়া। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে যেমন বলা হয়েছে, দেশ নানা বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ইতিবাচক গতি ধরে রাখতে পেরেছে। তবে এই অর্জন যে স্থায়ী নয়, তাও স্পষ্ট করে সতর্ক করেছে প্রতিবেদনটি। ২০২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৩.৯৭ শতাংশে-যা আগের বছরের তুলনায় সামান্য কম হলেও একটি ইতিবাচক ধারা নির্দেশ করে। রপ্তানি বেড়েছে ৭.৭২ শতাংশ, রেমিট্যান্স বেড়েছে ২৬.৮৩ শতাংশ হারে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩১.৭৭ বিলিয়ন ডলারে। মুদ্রাস্ফীতি কমে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন ৮.৪৮ শতাংশে নামায় সাধারণ মানুষ কিছুটা স্বস্তি পেয়েছে। এই সূচকগুলো নিঃসন্দেহে অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের ইঙ্গিত দেয়। তবে এই স্বস্তির ভেতরেও রয়েছে গভীর আশঙ্কা। বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ পরিস্থিতি, লোহিত সাগর ও মালাক্কা প্রণালির অস্থিরতা এবং যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য দ্বন্দ্ব বাংলাদেশের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। এসব সংকট আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, খাদ্য ও পরিবহন খরচ বাড়াতে পারে, যা মূল্যস্ফীতিকে আবারও উর্ধ্বমুখী করবে। এর সরাসরি প্রভাব পড়বে দেশের রপ্তানি, আমদানি ও বিনিয়োগ প্রবাহে। অভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটেও অর্থনীতি রয়েছে চাপের মুখে। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের অভাব ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নতুন বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, সড়ক অবরোধ, সহিংসতা-এসবের প্রভাব অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি উদ্যোক্তা শ্রেণির ওপর পড়ছে সবচেয়ে বেশি। বিনিয়োগকারীরা স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো অর্থনীতিতে আস্থা রাখতে পারেন না-এ কথা নতুন নয়। অর্থনীতির দীর্ঘমেয়াদি স্থিতি নিশ্চিত করতে হলে এখন প্রয়োজন বাস্তবমুখী পদক্ষেপ-রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণ, প্রশাসনিক জটিলতা হ্রাস, এবং ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি। ব্যাংকিং খাতের সংস্কার, মুদ্রানীতি শিথিলকরণ এবং রপ্তানি বাজারের বৈচিত্র্য আনয়ন হতে পারে টেকসই প্রবৃদ্ধির চাবিকাঠি। বাংলাদেশ অতীতে বারবার প্রমাণ করেছে-সংকটের মধ্যেও ঘুরে দাঁড়ানোর সক্ষমতা তার আছে। এখন প্রয়োজন সেই সক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার মতো রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও নীতিগত ধারাবাহিকতা। অন্যথায় অর্জিত স্থিতিশীলতা এক মুহূর্তেই নষ্ট হয়ে যেতে পারে, এবং অর্থনীতির ইতিবাচক ধারা হারিয়ে যাবে অনিশ্চয়তার ঘূর্ণিপাকে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে