ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ডিসেম্বর মাসের প্রথমার্ধেই তফসিল ঘোষণা করা হবে। নির্বাচনকে ঘিরে পর্যবেক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা কার্যকর করা হবে এবং ভুয়া পর্যবেক্ষক শনাক্তে ব্যবহার করা হবে কিউআর কোড। মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় নির্বাচন ভবনে দিনব্যাপী এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
প্রেক্ষাপটে উঠে আসে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে কমিশনের প্রস্তুতি এবং পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা। সংলাপের শুরুতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, ভালো নির্বাচন আয়োজন কমিশনের দায়িত্ব এবং সেই লক্ষ্যেই সব পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চান তারা। তার মতে, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাদের অবশ্যই রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে।
অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করার পর দশ দিনের মধ্যে পর্যবেক্ষকদের তালিকা কমিশনে জমা দিতে হবে। তিনি বলেন, ২০২৬ সালে দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে স্বচ্ছ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং এতে ব্যত্যয় ঘটানোর চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তার ভাষায়, নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাড়বে এবং পুরো প্রক্রিয়াই হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক।
সংলাপে সানাউল্লাহ আরও স্পষ্ট করে বলেন, পর্যবেক্ষকদের নিয়োগে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত পক্ষপাতিত্ব চলবে না। মানহীন পর্যবেক্ষকের প্রয়োজন নেই। বিদেশিরা দেশি সংস্থার হয়ে পর্যবেক্ষক হতে পারবেন না, তাদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে নিজস্ব নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হবে। ফ্রিল্যান্স পর্যবেক্ষকও অনুমোদন পাবে না। নির্বাচনের আগের দিন, নির্বাচনের দিন এবং পরের দিন মোট তিন দিন পর্যবেক্ষকেরা দায়িত্ব পালন করবেন।
ভুয়া পর্যবেক্ষক শনাক্তে পরিচয়পত্রে কিউআর কোড যুক্ত করার ঘোষণা দেন সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষকদের তালিকা, পরিচয় এবং মাঠপর্যায়ের আন্দোলন পর্যবেক্ষণে কিউআর কোড কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সিইসি নাসির উদ্দিনও একইসঙ্গে সতর্ক করেন যে মাঠপর্যায়ের কর্মীরা যেন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত না হন। তিনি বলেন, পর্যবেক্ষকদের চোখই হলো ইসির সিসি ক্যামেরা এবং এই চোখ নিরপেক্ষ না হলে পুরো পর্যবেক্ষণই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।
প্রায় ৪০টি দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধিরা সংলাপে অংশ নেন। সিইসি জানান, নতুন সংস্থাগুলোর প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং কমিশনের নিজস্ব সুপারভাইজরি কাঠামোর পাশাপাশি পর্যবেক্ষকদের তথ্যও নির্বাচন ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করবে। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথাও স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।