তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি শেষ, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ১০:৩৬ এএম
তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি শেষ, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠক আজ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটকে সামনে রেখে সমস্ত প্রস্তুতি চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ বুধবার, ১০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এই বৈঠকের পরই বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে রেকর্ড করা হবে সিইসির জাতির উদ্দেশে ভাষণ, যেখানে থাকছে ভোটের তফসিল ঘোষণা।

নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে তফসিল ঘোষণার জন্য প্রয়োজনীয় সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে। কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সব প্রস্তুতি হয়ে গেছে, এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তিনি জানান, আজ বিকেলেই ভাষণ রেকর্ড হবে এবং পরে তা প্রচার করা হবে। আরেক কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানিয়েছেন, বুধবারের বৈঠকের পর সন্ধ্যায় কিংবা বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় এবার প্রথমবারের মতো দলটি ছাড়া ভোট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নিবন্ধন স্থগিত থাকায় ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকও থাকছে না। কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ বলেন, যার নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিল, তাদের প্রতীক ব্যালটে থাকতে পারে না।

এবার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যুক্ত হচ্ছে নতুন কিছু ব্যবস্থা। প্রথমবারের মতো আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসীরা, ভোটের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তা এবং কয়েদিরা। একই সঙ্গে কোনো দল জোট করলেও অন্য দলের প্রতীকে ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকছে না।

ভোটার তালিকার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী দেশে নিবন্ধিত ভোটার ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৪৮ লাখ ১৪ হাজার ৯০৭ জন, মহিলা ভোটার ৬ কোটি ২৮ লাখ ৭৯ হাজার ৪২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ হাজার ২৩৪ জন। ভোটগ্রহণ হবে ৪২ হাজার ৭৬১টি কেন্দ্রে। সব মিলিয়ে ভোটকক্ষের সংখ্যা ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯টি। একইসঙ্গে দুই ভোট হওয়ায় গোপন কক্ষ আরও বাড়তে পারে। ভোট নেওয়া হবে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে সাড়ে ৪টা পর্যন্ত।

অর্ধশতাধিক নিবন্ধিত দল এবার ভোটে অংশ নিতে পারবে। বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ ৫৬টি নিবন্ধিত দলের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যাদের নিবন্ধন বৈধ, তাদের অংশগ্রহণে কোনো বাধা নেই।

তফসিল ঘোষণার পর দুই দিনের মধ্যেই আগাম প্রচারের সব সামগ্রী সরিয়ে ফেলতে হবে। কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানিয়েছেন, আচরণবিধি ভাঙলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও মাঠে নামবেন, পাশাপাশি কাজ করবে নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মনে করেন, আগের তুলনায় এখন পরিস্থিতি অনেক ভালো। তিনি বলেন, পুলিশসহ সব নিরাপত্তা সংস্থা সমন্বিতভাবে দায়িত্ব পালন করছে। মাঝে মাঝে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও সার্বিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ভোটারদের বোঝাতে এবং দুই ব্যালটে কত সময় লাগে তা যাচাই করতে মক ভোটিংয়ের আয়োজনও চলছে।

সব মিলিয়ে আজকের বঙ্গভবন বৈঠককেই নির্বাচন ঘিরে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ এর পরই নির্বাচন কমিশনের ভাষণ রেকর্ড হবে এবং দেশ পাবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে