বিরলে জামায়াতের ছাত্র-যুব ও নাগরিক সমাবেশ

এফএনএস (মোঃ আতিউর রহমান; বিরল, দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৯ পিএম
বিরলে জামায়াতের ছাত্র-যুব ও নাগরিক সমাবেশ

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের এই জমিনে এই ভুখন্ডে দীর্ঘদিন যাবৎ মানুষ অন্যায় জুলুম নির্যাতন নীপিড়নের বিরুদ্ধে লাড়াই করেছে এমনকি জীবন দিয়েছে। তারা কখনো কোন বাতিলের কাছে, জালিমের কাছে, কোন আধিপত্তের কাছে, সাম্রাজ্যবাদীদের কাছে মাথা নত করে নাই। সেই ঔপনেবেশিক আমল থেকে যদি আমরা লক্ষ্য করি এখানে বালাকোটের প্রান্তরে শহীদ আহমেদ বীরনবী, শহীদ ইসমাইল জীবন দিয়েছেন। হাজী শরিয়ত উল্লাহ এখানে আন্দোলন করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, লড়াই করেছেন। বৃটিশদের বিরুদ্ধে তিনি সকলকে সোচ্চার করেছেন, জাগিয়ে তুলেছেন। শহীদ তিতুমীর বাঁশের কেল্লা তৈরী করে লড়াই করেছেন,জীবন দিয়েছেন। তারপরও তিনি ঔপনেবেশিক শাসনের নিকট মাথা নত করে নাই। সেই লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অবশেষে ১৯৪৭ সালে আমরা ঔপনেবেশিক বলয় থেকে আমরা মুক্ত হয়েছি। কিন্তু এরপরে আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম এই উপমহাদেশে একদিন ন্যায় ইনসাফের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কাঠামো তৈরী হবে এবং এই রাষ্ট্র কাঠামোর মধ্য দিয়ে এই উপমহাদেশের মানুষের যে প্রত্যাশা সেটা পূরণ হবে। কিন্তু সেখানেও আমরা দেখেছি রাজনৈতিক অদূরদর্শিতা এবং যারা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতৃত্ব  দিয়েছেন তাদের মধ্যে উদারতা ও অদূরদর্শিতার কারণে এখানেও আমাদের স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে। শেষে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, কৃষক, ছাত্র-জনতা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের পর এই দেশকে স্বাধীন করেছিল। কিন্তু স্বাধীনতার পর একটি দল সম্পূর্ণ ক্রেডিটকে তার নিজের গ্রিপের মধ্যে তার পকেটে তুলে নিল এবং স্বাধীনতাকে তারা তাদের ব্যবসায়ীক রূপকরণ, চেতনার ডান্ডা নিয়ে এই সমাজে লুটপাটের রাজনীতি কায়েম করেছিল। আমরা দেখেছি যারা গণতন্ত্রের কথা বলেছিল, গণতন্ত্র  কায়েমের কথা বলেছিল,  গণতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলেছিল, সেসব মুজীবীয় বাকশাল কায়েম করে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে নিষিদ্ধ করে স্বৈরাচারের ভূমিকা পালন করেছিল। 

তিনি আরো বলেন,  আমরা দেখেছিলাম রক্ষীবাহিনী গঠন করেছে। রক্ষীবাহিনী গঠন করে শতশত হাজার হাজার বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছিল। সেই ১৯৭৪ সালে দূর্ভীক্ষ হয়েছিল। যে সমাজের যে রাষ্ট্রের বলা হতো গোলা ভরা ধান,পুকুর ভরা মাছ,অথচ সে রাষ্ট্রের সম্পদগুলোকে লুটপাট করে পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রে পাচার করা হয়েছিল এবং নিজেদের সম্পদের পাহাড় গড়েছিল। অথচ আমাদের মেহনতি মানুষগুলো না খেয়ে মারা গেছিল। মেহনতি মানুষগুলো মারা যাওয়ার কারণ উদঘাটন করা হয়নি, অদূর ভবিষ্যতে সে কারণগুলো উদঘাটিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। এভাবে করে এ সমাজের, এরাষ্ট্রের মানুষ তার মুক্তির জন্য জীবন দিয়েছে। সর্বশেষ আমরা দেখেছি জুলাই এবং আগস্টে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করার জন্য, যেখানে খুনি হাসিনা তার অপশাসনকে কায়েমের জন্য আলেম ওলামাদের হত্যা করেছে। সাংবাদিকদের হত্যা করেছে,  সমাজের রাহবারদের, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের,  যারা দূরদর্শীভাবে এই সমাজের, এই রাষ্ট্রের উপকার করেছে, তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে। যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেছে, তাদেরকে গুম করা হয়েছে,  নয়তো আয়না ঘরে বন্দী রাখা হয়েছে। অবর্ণনীয় নির্যাতনের মধ্য দিয়ে অনেককে জেলখানায় দিন কাটাতে হয়েছে। অবশেষে জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা জেগে উঠেছে। আমরা দেখেছি যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আক্রান্ত হলো তখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এগিয়ে এলো, যখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় আক্রান্ত হলো তখন সমস্ত স্কুল-কলেজেরছাত্র-ছাত্রীরা এগিয়ে এলো, যখন স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা আক্রান্ত হলো তখন মাদ্রাসার ছাত্ররা এগিয়ে এলো, যখন মাদ্রাসার ছাত্ররা আক্রান্ত হলো তখন আমাদের বাবারা এগিয়ে এলো, যখন আমাদের বাবারা আক্রান্ত হলো তখন আমাদের মায়েরা এগিয়ে এলো, যখন আমাদের মায়েরা আক্রান্ত হলো তখন আমাদের বোনেরা এগিয়ে এলো। এভাবে একটা পুরো জাতি, পুরো দেশ জেগে উঠলো। তখন আমরা দেখেছি একটি খুনি সরকার এর পতন হলো। খুনি হাসিনা এদেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। একটি স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের দোসররা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলো।

বুধবার দুপুরে বিরল সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয় ফুটবল খেলার মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিরল উপজেলা শাখার আয়োজনে ছাত্র- যুব ও নাগরিক সমাবেশে প্রধান বক্তার বক্তব্য প্রদানকালে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির এর কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম উপরোক্ত কথাগুলি বলেন। 

সমাবেশে প্রধান অতিথি জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ আনিছুর রহমান, প্রধান মেহমান দিনাজপুর-২ (বিরল-বোচাগঞ্জ) আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থী ও জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যক্ষ এ কে এম আফজালুল আনাম বক্তব্য রাখেন। 

বিশেষ অতিথি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিপি মুস্তাকুর রহমান জাহিদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিবুর রহমান পলাশ, জামায়াতের বিরল উপজেলা আমীর হাফেজ আব্দুর রশিদ, সেক্রেটারি আজমির হুসাইন, বোচাগঞ্জ উপজেলা আমীর আমিনুল ইসলাম, সেক্রেটারি মাহবুব আলম, দিনাজপুর-২ আসনের নির্বাচন পরিচালক তৈয়ব আলী, জেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি রাসেল রানা, শ্রমিক ফেডারেশনের বিরল উপজেলা সভাপতি নাজমুল ইসলাম, ছাত্রশিবির বিরল উপজেলা সভাপতি আসাদুজ্জামান নূর, সেক্রেটারি ওয়াকিল হোসেন, বোচাগঞ্জ ছাত্রশিবির সভাপতি মোহাইমিনুল ইসলাম, বিরল  যুব বিভাগের সেক্রেটারি আদিল হোসেন প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা আগামীর রাষ্ট্র পরিচালনায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থীকে দাড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার আহ্বান জানান।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে