অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ফুলবাড়ী কয়লা খনি নিয়ে দেওয়া বক্তব্যকে ‘ইতিহাস বিকৃতি’ এবং বিদেশি কোম্পানির ‘লুটপাটের সাফাই’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ফুলবাড়ী তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। বুধবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে ফুলবাড়ীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই কঠোর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফুলবাড়ী জাতীয় কমিটির আহবায়ক সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল। তিনি বলেন, ৬ ডিসেম্বর প্রেস সচিব তার ফেসবুক ভেরিফাইড পেইজে ফুলবাড়ী আন্দোলনকে ‘দলীয় এজেন্ডা’ এবং কয়লা না তোলাকে ‘আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত’ বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা মিথ্যাচার ও বিভ্রান্তিকর। এটি গত দুই দশকের জ্বালানি খাতের ‘মেধাগত দেউলিয়াত্ব’ এবং ‘আমদানি-নির্ভর লুটপাটতন্ত্র’ আড়াল করার অপকৌশল। জল-জমি-জীবন এবং জাতীয় সম্পদ কয়লা রক্ষায় ২০০৬ সালের ঐতিহাসিক ফুলবাড়ী আন্দোলন এবং ৩ শদীদদের হেয় করেছেন বলে প্রেস সচিবের বক্তব্যকে চরম ধৃষ্টতা বলা হয়েছে। সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, শফিকুল আলমের বক্তব্য অর্থনৈতিক সাশ্রয়ের মিথ্যা বয়ান-রপ্তানি ও ৬ শতাংশের ফাঁদ। চীন বা অস্ট্রেলিয়ার ভৌগলিক বাস্তবতায় ফুলবাড়ীতে উন্মুক্ত কয়লা খনি প্রকল্প করার পক্ষে সাফাই মানে বিদেশি কোম্পানি খুনি এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) কোম্পানির সাথে গোপন আঁতাত এবং উত্তারাঞ্চলকে চিরতরে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়া। তার বক্তব্য আদানি ও ভারত নির্ভর নতজানু পরাষ্ট্রনীতি এবং অসম গোপন চুক্তি আড়াল করার চেষ্টা। প্রেস সচিবের বক্তব্য দেশীয় গ্যাস উত্তোলনের চেয়ে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প ও এলএনজি আমদানি কমিশন, সুবিধা ও লুটপাট প্রসারিত করে বাপেক্সকে অকার্যকর করার হীন চেষ্টা। প্রেস সচিব দেশের কয়লা ভারত-চীন এবং বিদেশী কোম্পানি এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) কে হাতে তুলে দেয়ার যে চেষ্টা করেছেন তা গণশত্রুদের কাজ। সৈয়দ সাইফুল ইসলাম জুয়েল বলেন, এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) আগামী ১৭ ডিসেম্বর লন্ডনে বার্ষিক সাধারণসভায় ফুলবাড়ীকে নিয়ে নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে যাচ্ছে। তাদের এই সাধারণ সভার পূর্বে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বক্তব্য দেশের স্বার্থ বিকিয়ে বিদেশী কোম্পানির সাথে গোপন আঁতাত। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে আহবান জানাচ্ছি, দেশ বিরোধী দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের ফাঁদে পা না দিয়ে দেশের স্বার্থ রক্ষা এবং লন্ডনে এশিয়া এনার্জি (জিসিএম) এর সাধারণ সভার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার। একই সাথে প্রেস সচিবের বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লন্ডনে এশিয়া এনার্জি কোম্পানি (জিসিএম) কোম্পানির বার্ষিক সাধারণসভার প্রতিবাদে ১৭ ডিসেম্বর বেলা ১১ টায় নিমতলা মোড়ে প্রতিবাদ সভার ঘোষণা করা হয়। এ সময় সংবাদসম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, তেল-গ্যস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব জয় প্রকাশ গুপ্ত, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক এসএম নুরুজ্জামান জামান, বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের সম্পাদক সঞ্জিত প্রসাদ জিতু, জাতীয় গণফ্রন্টের আ: মজিদ, গণ সংহতি আন্দোলনের আবুল খায়ের, সম্মিলিত নাগরিক সমাজের আহবায়ক হামিদুল হক, আদিবাসী বাঙ্গালী মুক্তি সংগ্রাম কমিটির আহবায়ক রামাই সরেন, নয়া গণতান্ত্রিক গণমোর্চার সংগঠক আমিনুল হক, দেশ প্রেমিক বিপ্লবী কৃষক শ্রমিক ছাত্র জনতার আহবায়ক হিমেল মণ্ডল প্রমুখ। সংবাদ সম্মেলনে একই সাথে ৬ দফা দাবি জানানো হয়েছে। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে।
১. অবিলম্বে প্রেস সচিব শফিকুল আলমের ফুলবাড়ী নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
২. ২০০৬ সালের ৩০শে আগস্ট স্বাক্ষরিত ফুলবাড়ী ৬ দফা চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
৩. অবৈধভাবে বাংলাদেশের কয়লাখনি দেখিয়ে লন্ডনে শেয়ার ব্যবসা বন্ধ ও জালিয়াতি কোম্পানি এশিয়া এনার্জিকে চিরতরে বহিষ্কার করতে হবে।
৪. ফুলবাড়ী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
৫. বড়পুকুরিয়ার উত্তরাংশে উন্মুক্ত কয়লাখনি করার চক্রান্ত বন্ধ করতে হবে।
৬. জাতীয় কমিটি প্রস্তাবিত পরিবেশবান্ধব, সুলভ ও টেকসই জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে।