আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মায়ের ডাক এর উদ্যোগে ৯৬ গুলশান এভিনিউ গুম তদন্ত কমিশন অফিসের সামনে ভিকটিম পরিবার মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে। মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন মায়ের ডাক এর মারুফা ইসলাম ফেরদৌসী। মোঃ মঞ্জুর হোসেন ঈসার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য রাখেন মায়ের ডাক এর আন্তর্জাতিক সমন্বয়ক রিমন ইসলাম, ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধ আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ অলিদ বিন সিদ্দিক তালুকদার, ভিকটিম পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন আমান, জাহিদ খান সাকিল, কাজী শিলা, নাসিমা আক্তার, শফিকুল ইসলাম, ঝুমুর, মিতু আক্তার প্রমুখ। মানববন্ধন শেষে গুম কমিশন অফিসে স্মারক লিপি প্রদান করতে গেলে বাধার সৃষ্টি করে। সেই সময় তারা সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিলে ৫ জনকে স্মারক লিপি প্রদান করার অনুমতি দেন। মায়ের ডাক এর আন্তর্জাতিক বিষয়ক সমন্বয়ক রিমন ইসলাম বলেন, ১৫ মাস হলে গেল এখনও এখানে যারা ভিকটিম পরিবারের সদস্য রয়েছে তাদের কেউ ফিরে আসেনি। অথচ গুম তদন্ত কমিশন দু একজন যারা ফিরে এসেছে তাদেরকে নিয়ে প্রতিবেদন ও মিডিয়া ট্রায়াল দিয়েছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি এই তদন্ত কমিশন তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন করবেন। তাহলেই আমাদের স্বজনরা কোথায় আছে আমরা জানতে পারবো। স্মারক লিপি গ্রহণ করেন গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস ও সাজ্জাদ হোসেন। ৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১. যে সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মরত অফিসারগণ (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান জঅই, পুলিশ, ডিবি, এন এস আই ও ডি জি এফ আই ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী) গুম খুনের মত মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের অবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক অভিযুক্ত ২৮ জন সেনা সদস্যকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। ২. যে সকল গুমের শিকার ব্যক্তিবর্গ এখনো ফিরে আসেনি তাদের সঠিক সন্ধান বা তাদের সাথে কি করা হয়েছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে তদন্ত করে পরিবারগুলোকে জানাতে হবে এবং দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ৩. সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে (র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান জঅই, পুলিশ, ডিবি, এন এস আই ও ডি জি এফ আই ও বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী ) একটি সুরক্ষিত, পেশাদার ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে— যাতে ভবিষ্যতে কোনো রাজনৈতিক শক্তি এ প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করতে না পারে। ৪. যে সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তাগন গুম খুনের গোপন বন্দিশালর আলামত নষ্ট করেছেন তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। ৫. গুম কমিশন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমসহ আদালতের সাক্ষীগণদের কে সংশ্লিষ্ট সকলের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৬. গুমের স্বীকার যে সকল ভুক্তভোগী ফিরে আসেননি তাদের পরিবারের ব্যাংকিং লেনদেনের ও সম্পদ সংক্রান্ত নানা রকম সমস্যা সমাধানের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ৭. “কে খুঁজছে নিখোঁজ মানুষদের?” — এই প্রশ্নের জবাব দিতে রাষ্ট্রকে অবিলম্বে একটি স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডসম্মত জাতীয় অনুসন্ধান কমিশন বা মেকানিজম গঠন করতে হবে, যা নিখোঁজদের খোঁজ, তথ্য উন্মুক্ত করা এবং দায়ীদের জবাবদিহিতার জন্য কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। এই অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় পরিবার ও ভুক্তভোগীদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। ৮. সকল বিচার বহির্ভূত হত্যা ও গণহত্যার ( পিলখানা ম্যাসাগার, শাপলায় গণহত্যা এবং জুলাই গণহত্যা) প্রকৃত দোষীদের কে তদন্ত করে দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জোর দাবি জানাচ্ছি।