বাংলাদেশের বিচার বিভাগের আলাদা প্রশাসনিক কাঠামো গঠনের দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় উদ্বোধন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে সুপ্রিম কোর্টের প্রশাসনিক ভবন ৪ এ প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ এই পৃথক সচিবালয়ের উদ্বোধন করেন। বিচার বিভাগের স্বতন্ত্রতা ও কার্যক্রমকে আরও সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে এ উদ্যোগকে দেশের বিচারব্যবস্থায় বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং রেজিস্ট্রার জেনারেল মো. হাবিবুর রহমান সিদ্দিকীসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শুরু থেকেই পৃথক সচিবালয়ের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আলোচনা চলছিল এবং গত কয়েক সপ্তাহে তা বাস্তবায়নের পথে দ্রুত অগ্রগতি ঘটে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রাখতে ভবিষ্যত সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য। তিনি জানান, “বিচার বিভাগের সফলতা এবং ব্যর্থতা দুটিই আমাদের গ্রহণ করতে হবে। সম্মিলিত প্রয়াস ছাড়া এই সচিবালয় প্রতিষ্ঠা সম্ভব হতো না।” আইন উপদেষ্টা বলেন, এখন থেকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে বিচার বিভাগ কাজ করতে পারবে এবং এর কার্যক্রম হবে পুরোপুরি স্বাধীন।
অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে প্রধান বিচারপতি জানান, এই সচিবালয়ের যাত্রা তাদের সহযোগিতায় শুরু হলেও আগামী সরকারও বিচার বিভাগকে শক্তিশালী করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
পৃথক সচিবালয় প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু হয় গত বছরের ২৭ অক্টোবর, যখন সুপ্রিম কোর্ট থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাবে সংবিধানের ১০৯ অনুচ্ছেদ বাস্তবায়নকে কেন্দ্র করে অধস্তন আদালত ও ট্রাইব্যুনালের তত্ত্বাবধান আরও কার্যকর করতে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয়ের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়। এর পর ২০ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সচিবালয় গঠনের অধ্যাদেশের খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। পরে ৩০ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির নির্দেশে আইন মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে অধ্যাদেশ জারি করে।
অধ্যাদেশ জারির পর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন জানিয়েছে, বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বতন্ত্রীকরণের পথে এটি বড় অর্জন। তারা আশা করছে, নতুন সচিবালয় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়বে এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন আরও ত্বরান্বিত হবে।