দেশের ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন বিষয়ে গণভোট আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে। বৃহস্পতিবার ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন এ তফসিল ঘোষণা করেন। একদিনেই সংসদ নির্বাচন এবং গণভোট হওয়ায় এবারের ভোট আয়োজনকে নির্বাচন কমিশন সময়োপযোগী ও তাৎপর্যপূর্ণ বলে ব্যাখ্যা করেছে।
সিইসি জানান, একসঙ্গে দুই প্রক্রিয়া পরিচালনার কারণে ভোটের সময় বাড়ানো হয়েছে এবং প্রতিটি কেন্দ্রে দুটো পৃথক ব্যালটের জন্য দুটো গোপন বুথ রাখা হবে। তিনি বলেন, ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কমিশন। এবার মোট ভোটার সংখ্যা ১২ কোটি ৭৬ লাখ ৯৫ হাজার ১৮৩ জন।
এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ রাজনৈতিক আলোচনার পর অবশেষে স্পষ্ট হলো নির্বাচনপথ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এরপর ১৬ মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে তফসিল চূড়ান্ত হলো। এর আগে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভোটের তারিখ চূড়ান্ত করেন সিইসি। পাশাপাশি প্রধান বিচারপতির কাছ থেকে মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালনের জন্য ৩০০ বিচারক চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে আগামী ২৯ ডিসেম্বর সোমবার পর্যন্ত। ৩০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার থেকে ৪ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত চলবে বাছাইয়ের কাজ। ১১ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত আপিল করা যাবে এবং আপিল নিষ্পত্তি হবে ১২ জানুয়ারি সোমবার থেকে ১৮ জানুয়ারি রোববার পর্যন্ত। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ সময় ২০ জানুয়ারি মঙ্গলবার। প্রতীক বরাদ্দ হবে ২১ জানুয়ারি বুধবার এবং ২২ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হবে প্রচারণা, যা চলবে ১০ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
একই দিনে দুই ভোটের প্রক্রিয়া এবার নতুন অভিজ্ঞতা তৈরি করবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। তিনি জানান, সংসদের ব্যালট হবে সাদা কালো এবং গণভোটের ব্যালট হবে রঙিন। গণভোটে ভোটাররা জুলাই জাতীয় সনদে উল্লেখিত সাংবিধানিক সংস্কারের চারটি মূল প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দেবেন। ব্যালট পেপারে পরবর্তী সংসদকে দুই কক্ষবিশিষ্ট করার প্রস্তাবসহ বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, মৌলিক অধিকার এবং রাজনৈতিক সংস্কার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ভোটার সংখ্যা ব্যাপক হওয়ায় কেন্দ্র ও বুথ সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। এবার ভোটকেন্দ্র থাকছে ৪২ হাজার ৭৬১টি এবং ভোটকক্ষ আড়াই লাখের মতো। প্রবাসী ভোটারদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার সুযোগও রাখা হয়েছে, যা এ নির্বাচনের অন্যতম উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। ইতোমধ্যে তিন লাখের বেশি প্রবাসী ভোটার নিবন্ধন করেছেন।
নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের আয়োজন সময় ব্যবস্থাপনা, গণনা ও নিরাপত্তার ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। বিশ্লেষক আব্দুল আলীম বলেন, “একজন ভোটারের দুটি ব্যালট দেওয়ায় সময় বাড়বে এবং গণনার ক্ষেত্রেও সতর্কতা দরকার।” তিনি আরও বলেন, ভোট শেষে গণনার দেরি সহিংসতায় গড়ানোর ঝুঁকি তৈরি করতে পারে, তাই প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতি।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ থাকলেও সিইসি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “ভয়ভীতি বা প্রলোভন থেকে মুক্ত থেকে ভোট দিন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে।” তিনি অপতথ্য রোধে জনগণকে সতর্ক থাকতে বলেন এবং জানান যে মিথ্যা তথ্য প্রচার বা শেয়ার করা আইনানুগভাবে দণ্ডনীয় অপরাধ।
নতুন নির্বাচন কমিশনের এটি প্রথম জাতীয় ভোট আয়োজন। কমিশনের পাঁচ সদস্যই জানিয়েছেন, স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনায় তারা বদ্ধপরিকর।
১২ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৭টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। এক দিনে দুই ব্যালটে ভোট দিয়ে ব্যালট দুটি আলাদা বাক্সে ফেলতে হবে।