পাবনার চাটমোহর উপজেলার কাটেঙ্গা গ্রামে ক্যানসার আক্রান্ত স্বামীকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত স্ত্রী শারমিন খাতুন ও তার প্রেমিক অনিককে আটক করেছে পুলিশ। গত ৩০ নভেম্বর চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা ইউনিয়নের বরদানগর দক্ষিণপাড়া গ্রামে এই হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।
বিষয় জানাজানি হলে শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) বিকালে এলাকাবাসী শারমিন ও তার প্রেমিক অনিককে আটক করে পুলিশকে জানায়। রাতে পুলিশ তাদের আটক করে। শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) আটককৃতদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
হত্যাকান্ডের শিকার স্বামী শের আলী (৩৫) বরদানগর দক্ষিণপাড়া গ্রামের ভোলা প্রামাণিকের ছেলে। অভিযুক্ত স্ত্রী শারমিন খাতুন (২৬) পার্শ্ববর্তী কাটেঙ্গা গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে এবং তার প্রেমিক অনিক (২২) একই গ্রামের মহাজন সরকারের ছেলে।
জানা গেছে,গত ৩০ নভেম্বর শের আলীর মৃত্যু হয়। সবার ধারণা ছিলো তার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু পরে স্ত্রী শারমিনের কথাবার্তা ও আচরণে পরিবারের লেঅকদের সন্দেহ হয়। ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে পরিবারের সদস্যরা কৌশল অবলম্বন করেন। এক সময় জানতে পারে অনিকের সাথে তার সম্পর্ক। শারমিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন থেকে প্রেমিক অনিককে টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আসতে বলে মেসেজ পাঠানো হয়। অনিক সেই মেসেজের জবাব দিয়ে টাকা নিতে বিকেল ৩টার দিকে যান কাঠেঙ্গা গ্রামে শারমিনের বাড়ির পাশে। স্থানীয়রা তাকে আটক করে। জিজ্ঞাসাবাদে অসংলগ্ন বক্তব্য ও পরস্পরবিরোধী তথ্য দিলে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
পরে আটক অনিক ও শারমিন জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করে,প্রায় চার মাস ধরে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। অনিক দাবি করে,তিনি প্রথমে শারমিনের ননদ নদীর সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে ওই বাড়িতে যাতায়াত করতো। একপর্যায়ে অনিক ও শারমিন পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। তাদের মধ্যে একাধিকবার সাক্ষাৎ ও শারীরিক সম্পর্কের কথাও স্বীকার করে তারা।
আটক শারমিন এলাকাবাসীর সামনে স্বীকার করে,গত ৩০ নভেম্বর একসঙ্গে দশটি ঘুমের ওষুধ তার স্বামী শের আলীকে খাইয়েছিলেন। পরে শের আলীর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে এবং অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। কিছু সময়ের মধ্যেই তার মৃত্যু হয়। সবাই তার মৃত্যু ক্যানসারে হয়েছে মনে করে দাফন সম্পন্ন করেন।
শের আলীর মা শিরীনা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার অসুস্থ ছেলেকে ওর বউ ঘুমের ওষুধ খাইয়েছে। সে সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে এসে দেখি আমার ছেলে আর বেঁচে নেই। আমি এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও শারমিন ও অনিককে তাৎক্ষনিক আটক না করে গ্রাম্য সালিসে মীমাংসার কথা বলে। এলাকাবাসীর মধ্যে এনিয়ে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হলে রাত ৯টার দিকে দু’জনকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সরোয়ার বলেন,মৃত ব্যক্তির পরিবারে পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি বা মামলা করেনি। যেহেতু ঘটনাস্থল থেকে দুজনকে আটক করা হয়েছে,সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে পুলিশ আইনগত প্রক্রিয়া শেষে তাদের পাবনা আদালতে সোপর্দ করে।