ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দেশের শিল্পায়নের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। সেই বিবেচনায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) শিল্পনগরীগুলোর কার্যকর পরিচালনা অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু নাটোর বিসিক শিল্পনগরীর বাস্তব চিত্র সেই লক্ষ্য থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। প্রায় চার দশক পেরিয়ে গেলেও অবকাঠামোগত ঘাটতি, সেবা সংকট ও নীতিগত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের ব্যর্থতায় এখানকার শিল্পোদ্যোক্তাদের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত নাটোর বিসিকে বর্তমানে শতাধিক প্লট ও ৩৮টি শিল্প ইউনিট থাকলেও শিল্পনগরীটি নানা মৌলিক সমস্যায় জর্জরিত। ভাঙাচোরা সড়ক, অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্ষায় জলাবদ্ধতা, অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং গ্যাস সংযোগের অভাব সরাসরি উৎপাদন ব্যাহত করছে। উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, এসব সমস্যার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে, পণ্য নষ্ট হচ্ছে এবং প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া পরিস্থিতির গভীরতাই নির্দেশ করে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো, বিসিকের নিজস্ব বিধিমালায় যে সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে, তার বড় অংশই বাস্তবে প্রতিফলিত হচ্ছে না। শিল্প রেটে বিদ্যুৎ, পানি নিষ্কাশন, সড়ক উন্নয়ন, গ্যাস সংযোগ কিংবা প্রণোদনামূলক সহায়তা-এসব প্রতিশ্রুতি কাগজে থাকলেও উদ্যোক্তারা তার সুফল পাচ্ছেন না। এর ওপর পূর্বঘোষণা থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ সার্ভিস চার্জ বহুগুণ বাড়ানো উদ্যোক্তাদের আস্থাকে আরও দুর্বল করেছে। শুধু উদ্যোক্তারা নয়, শিল্পনগরীতে কর্মরত শ্রমিকদের অবস্থাও উদ্বেগজনক। কম মজুরি, বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বৈষম্যের অভিযোগ, সামাজিক ও শ্রমিক কল্যাণের প্রশ্ন তোলে। শিল্পনগরী টেকসই করতে হলে উৎপাদনের পাশাপাশি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করাও জরুরি। অন্যদিকে কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে সীমাবদ্ধতার চিত্রও উঠে আসে। জমি সংকটের কারণে বিসিকের সম্প্রসারণ থেমে আছে, স্থানীয় সহযোগিতা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের অভাবে বহু উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি-এ কথাও অস্বীকার করা যায় না। তবে দীর্ঘ সময় ধরে একই সমস্যার পুনরাবৃত্তি প্রাতিষ্ঠানিক দায় এড়ানোর সুযোগ দেয় না। নাটোরের মতো সম্ভাবনাময় জেলায় বিসিক শিল্পনগরীর স্থবিরতা নতুন শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথ রুদ্ধ করছে। অবকাঠামো উন্নয়ন, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগ, ন্যায্য সার্ভিস চার্জ এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা-এসব বিষয়ে দ্রুত, সমন্বিত ও বাস্তবমুখী সিদ্ধান্ত না এলে শিল্পায়নের এই প্ল্যাটফর্ম আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। শিল্পোদ্যোক্তাদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও স্থানীয় অর্থনীতিকে গতিশীল করাই এখন নাটোর বিসিকের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।