দেশের প্রতিটি প্রান্তে আজ মহান বিজয় দিবসের ৫৪তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে উৎসবমুখর ও গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজধানীসহ সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি ভবন ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, ৩১ বার তোপধ্বনি এবং শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে দিবসের শুভ সূচনা করা হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে লাখো মানুষ সকাল থেকেই জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে জমায়েত হন।
রাজধানীর সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানান এবং বিউগলে বাজে করুণ সুর। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ভোরে সাভারে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বিশেষ স্মারক ডাকটিকিট ও উদ্বোধনী খাম ও সিলমোহর উন্মোচন করেন।
দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। বিএনপি কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আজকের দিন আমাদের গৌরবের প্রতীক, আমরা শহীদদের আত্মত্যাগকে মনে রেখে গণতন্ত্র রক্ষায় অটল থাকব।” জাতীয় নাগরিক পার্টিও শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে।
সারা দেশের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিজয় দিবস উদযাপন হয়েছে নানা কর্মসূচির মাধ্যমে। টাঙ্গাইলে জেলা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঝিনাইদহে সদর থানা চত্বরে ৩১ বার তোপধ্বনি এবং স্বাধীনতা স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফটিকছড়ি উপজেলায় সকাল ১২টা ১ মিনিটে তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা হয় এবং কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ, কুচকাওয়াজ ও ডিসপ্লে অনুষ্ঠিত হয়।
সিরাজগঞ্জে বিজয় সৌধে সকাল থেকে জেলা প্রশাসক, পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষার্থীরা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভিড় করেন। নালিতাবাড়ী উপজেলায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসের সূচনা ও শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। চুয়াডাঙ্গা, শেরপুর, গোবিন্দগঞ্জ, আড়াইহাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুকসুদপুর, মঠবাড়িয়া, সাতক্ষীরা, টুঙ্গিপাড়া, ভান্ডারিয়া, মুন্সীগঞ্জ, জয়পুরহাট, কমলনগর, ভাঙ্গা এবং কাপাসিয়ায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলা যথাযোগ্য মর্যাদায় নানা কর্মসূচি ও কুচকাওয়াজ আয়োজন করে শহীদ বীর সন্তানদের স্মরণ করে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শহীদদের আত্মত্যাগ ও দেশপ্রেমের চেতনা শিশু-কৈশোর ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সারাদেশের বিদ্যালয়, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও আলোচনা সভা, চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি, রচনা প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনী সকাল ১১টা থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে ফ্লাই-পাস্ট এবং ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করেন।
শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে হাসপাতাল, কারাগার, এতিমখানা ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য উন্নত খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া দেশের প্রতিটি মসজিদ, মন্দির, গির্জা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের বিদেহী আত্মার শান্তি এবং দেশের অগ্রগতি কামনায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।