বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলীকে গুম করার পর হত্যা করা হয়েছে বলে তদন্তে তথ্য পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা এই নেতার ভাগ্য সম্পর্কে তদন্তে স্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে। একই সঙ্গে সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার গুরুতর অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে।
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এ জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে ফরমাল চার্জ দাখিলের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে চিফ প্রসিকিউটর এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, তদন্তে দেখা গেছে, ইলিয়াস আলীকে রাস্তা থেকে তুলে নেওয়ার পর গুম করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে তাকে হত্যা করা হয়েছে।
ইলিয়াস আলী বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এই নেতা সিলেট-২ আসন থেকে দুবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১২ সালের এপ্রিলে ঢাকার বনানীতে বাসার কাছ থেকে তাকে তুলে নেওয়া হয়। এরপর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। সেই সময় বিরোধী নেতাদের গুমের ঘটনায় রাষ্ট্রীয় সংস্থার ভূমিকা নিয়ে দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো প্রশ্ন তুললেও তৎকালীন সরকার অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিল।
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “ইলিয়াস আলীকে উঠিয়ে নেওয়া, তাকে গুম করা এবং পরে হত্যা করা হয়েছে, এমন তথ্য তদন্তে পাওয়া গেছে।” তিনি জানান, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে সংঘটিত গুম-খুনের ঘটনাগুলো তদন্ত করতে গিয়ে জিয়াউল আহসানকে অন্যতম প্রধান কুশীলব হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আনা তিনটি প্রধান অভিযোগে ১০০–এর বেশি মানুষকে গুম করে হত্যার প্রমাণ পাওয়া গেছে। প্রসিকিউশনের কাছে মোট ৫০০ জনকে গুমের পর হত্যার তথ্য এসেছে। তিনি জানান, ২০১৫ সালে বিএনপির তৎকালীন যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদকে গুম করে ভারতে পাচারের পেছনেও জিয়াউল আহসানের ভূমিকা ছিল। একইভাবে ২০১৩ সালে তেজগাঁও থানার বিএনপি নেতা সাজিদুল ইসলাম সুমনসহ আটজনকে তুলে নেওয়ার ঘটনাও তার নির্দেশে সংঘটিত হয় বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ভয়াবহ পদ্ধতি তুলে ধরে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ভুক্তভোগীদের চোখ ও হাত-পা বেঁধে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হতো। এরপর লাশের পেটে সিমেন্টের বস্তা বা ইট বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। কখনো এসব হত্যাকাণ্ডকে ‘অপারেশন’ বা বনদস্যু দমনের নামে চালানো হতো এবং সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ভিন্ন বয়ান তৈরি করা হতো।
এদিন বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ প্রসিকিউশনের দাখিল করা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নেন। একই সঙ্গে ট্রাইব্যুনাল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করে তাকে হাজির করার নির্দেশ দেন। পরবর্তী শুনানির জন্য রোববার (২১ ডিসেম্বর) দিন ধার্য করা হয়েছে।
জিয়াউল আহসান ১৯৯১ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। র্যাব ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থায় দায়িত্ব পালন করে তিনি এক সময় ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের মহাপরিচালক হন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গত বছর ৬ আগস্ট তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় এবং পরে গ্রেপ্তার করা হয়।