বন্দরনগরীর উড়াল সড়ক চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নগরবাসীর স্বপ্নের এই উড়াল সড়ক যেন এখন পরিণত হয়েছে অপরাধ, দুর্ঘটনা আর মৃত্যুর ফাঁদ। বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনার শিকার ও প্রশাসনিক নিরাপত্তা না থাকায় রাত হলে ছিনতাইয়ের ফাঁদ- এসব যেন এই সড়কের নিত্যদিনের ঘটনা। উদ্বোধনের দুই বছর পার হলেও চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম শহরের লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে (শহীদ ওয়াসিম আকরাম এক্সপ্রেসওয়ে) যানবাহন ওঠানামার জন্য এখনো একটি র্যাম্পও (উড়াল সড়কে যানবাহন ওঠানামা) চালু হয়নি। ১৫.২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের চার লেনের এই এক্সপ্রেসওয়েতে ১৫টি র্যাম্পের মধ্যে প্রথম দিকে ৯টি র্যাম্প চালুর কথা ছিল। এর মধ্যে চারটির নির্মাণ শেষ হলেও সেখানে যানবাহন চলাচল শুরু হয়নি। বাকি পাঁচটির মধ্যে চারটির কাজ চলমান এবং অন্য একটি র্যাম্পের নির্মাণ শুরুই হয়নি। র্যাম্প চালু না হওয়ার কারণে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। এদিকে র্যাম্প ছাড়াই মূল এক্সপ্রেসওয়েতে (১৫.২০ কিলোমিটার) বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করলেও প্রত্যাশার তুলনায় খুবই কম। এই উড়াল সড়কে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ থাকলেও তা না মেনে অবাধে দুই চাকার এই যান চলাচল করছে। চট্টগ্রামের এক্সপ্রেসওয়েতে সর্বোচ্চ গতিসীমা নির্ধারণ করা হয় ৬০ কিলোমিটার। তবে আঁকাবাঁকা অংশে সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে ৪০ কিলোমিটার। এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি থামানো বা দাঁড় করিয়ে রাখা এবং গাড়ি থেকে নামা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে চলাচলের সময় অধিকাংশ গাড়িই গতিসীমা মেনে চলছে না। এক্সপ্রেসওয়ের দেওয়ানহাট, বারিক বিল্ডিং, সল্টগোলা, ইপিজেড, কাঠগড় এলাকায় বাঁক রয়েছে। বাঁকগুলোতে গতিরোধক রয়েছে, গতিসীমাও ৪০ কিলোমিটার। এরপরও গাড়ির গতি না কমিয়ে গাড়ি চালাতে দেখা গেছে চালকদের। এক্সপ্রেসওয়ের অনেক জায়গায় গাড়ি থামিয়ে যাত্রীরা বের হয়ে আসেন। ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছবি তুলতেও দেখা যায়। পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচল শুরুর পর থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর অভিযোগ ওঠে। এতে বারবার ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটতে থাকে। সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞগণ বহুবার এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনার সিংহভাগের জন্য যানবাহনের বেপরোয়া চালকদের দায়ী করছেন। সংশ্লিষ্ট চালকদের প্রশিক্ষণহীনতা এবং যানচলাচল বিষয়ক আইন ও বিধিবিষয়ক অজ্ঞতাকেও দায়ী করছেন তারা। আমরা আশা করি, চট্টগ্রাম পুলিশের পক্ষ থেকে এই উড়াল সড়কে বেপরোয়া যান চিহ্নিত করতে যে ডিজিটাল ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে, তা অবিলম্বে করা হবে। তবে পাশাপাশি পুলিশ তার দায়িত্ব আন্তরিকতার সঙ্গে পালন না করলে সব গরল ভেল হয়ে পড়বে।