প্রথাগত প্রচারণার বাইরে গিয়ে শিল্পের মাধ্যমে সামাজিক ব্যাধিকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল খুলনার কয়রা উপজেলার এক ব্যতিক্রমী আয়োজন। বাল্যবিবাহের অভিশাপ আর নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়তে মঞ্চ নাটককে বেছে নিয়েছিল আয়োজকরা, যা রূপ নিয়েছে সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত গণজোয়ারে। বৃহস্পতিবার উত্তর বেদকাশি ও মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ‘আমাল ফাউন্ডেশন’ ও ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর যৌথ উদ্যোগে এই বিশেষ নাট্য প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। ‘সুশীলন সাংস্কৃতিক দল, খুলনা’-এর শিল্পীদের প্রাণবন্ত অভিনয়ে উঠে আসে গ্রামীণ সমাজে বাল্যবিবাহের ভয়াবহ কুফল এবং নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর অমোঘ বার্তা। সাধারণত সচেতনতামূলক সভায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি নিয়ে সংশয় থাকলেও, এই আয়োজনে দেখা গেছে ঠিক উল্টো চিত্র। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “আমার দীর্ঘ জনপ্রতিনিধি জীবনে একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে এত বিপুল সংখ্যক নারী ও পুরুষের উপস্থিতি আমি আগে কখনও দেখিনি। আমাল ফাউন্ডেশন প্রমাণ করেছে যে, সৃজনশীল উপস্থাপনা দিয়ে মানুষকে জাগ্রত করা সম্ভব। নাটক চলাকালীন দেখা যায় দর্শকদের মধ্যে পিনপতন নীরবতা। সাবলীল অভিনয় আর চেনা গল্পের মাধ্যমে যখন বাল্যবিবাহের শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির চিত্র ফুটে ওঠে, তখন উপস্থিত দর্শকদের অনেকের চোখেই দেখা যায় জল। আয়োজকরা মনে করেন, লিফলেট বিলি বা বক্তৃতার চেয়ে দৃশ্যকাব্য মানুষের হৃদয়ে দ্রুত পৌঁছাতে সক্ষম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আবুল কালাম আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক অফিসার মো: মনিরুজ্জামান। এ সময় তারা বলেন, সামাজিক কুসংস্কার দূর করতে হলে এই ধরণের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আমাল ফাউন্ডেশনের সহকারী প্রোগ্রাম অফিসার জাহিদুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, “মঞ্চ নাটক সরাসরি মানুষের হৃদয়ে কড়া নাড়ে। আমরা চাই প্রতিটি ঘরে ঘরে সচেতনতার এই বার্তা পৌঁছে যাক।”অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান বাবু বিভূতিভূষণ, ইউপি সদস্য মাসুম বিল্লাহ এবং আমাল ফাউন্ডেশনের ইভেন্ট অর্গানাইজার মোঃ আজিজুল হক, যার সার্বিক তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানটি সফলভাবে পরিচালিত হয়। বাল্যবিবাহ ও নারী নির্যাতনমুক্ত একটি আদর্শ সমাজ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে মাঠ পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে আমাল ফাউন্ডেশন ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন। উপস্থিত দর্শক ও সচেতন মহল আশা প্রকাশ করেন, শুধু বিশেষ দিনগুলোতে নয়, নিয়মিত বিরতিতে এমন আয়োজন তৃণমূল মানুষের চিন্তাধারা বদলে দিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।