আজ সতেরো বছর পর দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে ঢাকার পূর্বাচলের ৩০০ ফিট এলাকায় আয়োজিত গণসংবর্ধনায় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে জনসমাগম হবে বলে প্রত্যাশা করছে বিএনপি।
দলটির নেতারা বলছেন, এটি শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার দেশে ফেরা নয়, বরং বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। সেই লক্ষ্যেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা আগেভাগেই রাজধানীতে আসতে শুরু করেছেন। ৩০০ ফিট এলাকার সমাবেশস্থল ইতোমধ্যে স্লোগান, প্ল্যাকার্ড ও ব্যানারে উৎসবমুখর হয়ে উঠেছে।
ওয়ান ইলেভেন–পরবর্তী সময়ে ২০০৮ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান তারেক রহমান। এরপর দীর্ঘ সময় তিনি সেখানেই অবস্থান করেন। আজ বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টা ৪৫ থেকে ১১টা ৫০ মিনিটের মধ্যে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁর অবতরণের কথা রয়েছে বলে বিএনপি সূত্রে জানানো হয়েছে।
বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তিনি ৩০০ ফিট এলাকায় দলের আয়োজিত গণসংবর্ধনায় যোগ দেবেন। সেখানে তিনি একাই বক্তব্য রাখবেন। সংবর্ধনা শেষে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে গিয়ে তাঁর মা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখবেন বলে জানানো হয়েছে।
গণসংবর্ধনার প্রস্তুতি নিয়ে মঙ্গলবার মঞ্চ পরিদর্শন শেষে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, “এই আয়োজন অতীতের সব রাজনৈতিক জনসমাবেশের উপস্থিতিকে ছাড়িয়ে যাবে। আমরা অন্তত অর্ধকোটি মানুষের উপস্থিতি প্রত্যাশা করছি।”
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন ঘিরে সোমবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও বিস্তারিত আলোচনা হয়। বৈঠকে তাঁকে ঢাকা থেকেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুরোধ জানান দলের শীর্ষ নেতারা। সংবর্ধনার মঞ্চে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের পাশাপাশি মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত থাকবেন। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত ও আহত পরিবারের একজন করে সদস্যকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নির্ধারিত যাত্রী ছাড়া অন্য কেউ বিমানবন্দরে প্রবেশ করতে পারবেন না।
বিএনপি জানিয়েছে, বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত তারেক রহমানের চলাচলের পুরো পথে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে। তাঁর নিরাপত্তার সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে। দলীয় নিরাপত্তার পাশাপাশি সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে সম্ভাব্য জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে আগাম দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএনপি। বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) গুলশানে দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “তারেক রহমানের আগমন ও সংবর্ধনা ঘিরে যদি সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হয়, সে জন্য আমরা আগেই ক্ষমা চাইছি।”
তিনি জানান, পুরো আয়োজন শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দর ও সংবর্ধনাস্থলের জন্য আলাদা নিরাপত্তা পাশ, নির্দিষ্ট রেড জোন এবং মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপনসহ সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।