বাঞ্ছারামপুরে আ’লীগের চামচামি করে কোটিপতি

এফএনএস (নাছির উদ্দিন দুলাল; বাঞ্ছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : | প্রকাশ: ১১ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৪:৩৯ পিএম
বাঞ্ছারামপুরে আ’লীগের চামচামি করে কোটিপতি

ছিলেন গ্রামের বাউন্ডেলে। পিতা কৃষক সুলতান মিয়ার সংসারে অর্থাভাবে এক বেলা হাঁড়ি চড়ে তো আরেক বেলা উপোস। সেই মানুষটিই আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর অবৈধ বালু ব্যবসা থেকে বিচার শালিশ ও দলের চামচামি করে ১৫  বছরের ব্যবধানে কোটি কোটি টাকার মালিক। গ্রামের বাড়িতে উঠেছে প্রাসাদ সদৃশ্য  ভবন। ঢাকার বনশ্রীতে একাধিক ফ্ল্যাট, উজানচর মোড়ে বিশাল রড, সিমেন্ট, ইট- বালুর দোকান- সে এক এলাহী কাণ্ড! বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে নেপালে আছেন বলে তার স্ত্রী জানান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের বুধাইরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছোট তাজের নামের সম্পদহীন মানুষটি কোন আলাদিনের চেরাগের সন্ধান পেয়ে এভাবে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে গেলেন- এমন প্রশ্ন আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে পরিচিত মণ্ডলের সর্বত্র। সরেজমিনে ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে নেপথ্য কারণটা অবশেষে জানা গেছে। ছোট তাজের এই আলাদিনের চেরাগ আর কিছু না, দালালি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনি চেয়ারম্যান ও জনির মামা সাবেক আওয়ামীলীগের এমপি ক্যাপ্টেন তাজের চামচামি। ২০০৯ এর দিকে বিএনপি থেকে নির্বাচিত উজানচর ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান আক্তার হোসেনের কাছে চাঁদা দাবী করেন এই ছোট তাজ। তিনি চাঁদা না দিলে রাস্তায় প্রকাশ্যে তার স্কুলগামী মেয়ের সামনে বেধড়ক পেটায়।তিনি মামলা করলে ছোট তাজ দীর্ঘদিন কারাভোগ করেন। ২০১১ সালে দুই বছর কারা ভোগের পর জামিনে এসে শুরু করেন মাদক ব্যবসা। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর শুরু দাপটের প্রভাব। জনি চেয়ারম্যানকে ব্যবহার করে জমিদখল, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, প্রতিপক্ষকে নির্যাতন, কমিশন বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে এই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ছোট তাজের বিরুদ্ধে। ২০১৮-১৯ সালে সরকারি ড্রেজারের মাধ্যমে তিতাস নদী খননের সময় বুধাইরকান্দি, রাধানগরের খালবিল ডোবা সহ কৃষি জমি জোরপূর্বক  ভরাট করে অন্তত শতাধিক পরিবারের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার বালু বানিজ্য করেন বলে অভিযোগ করেন প্রতিবেশী নুরুন নবী।তিনি রেকর্ড করা বক্তব্যে বলেন, বালু ভরাটের কাজে আমার কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা নেয় ব্যবসার কাজে। জনি চেয়ারম্যান ও ছোট তাজের কথায় আমি দিয়ে দেই,লাভের আশায়।ছোট তাজ আমাকে আর টাকা ফেরত না দিয়ে হুমকি দিচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ার পর থেকেই জোর দখল, বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণসহ নিজস্ব লোকজন নিয়ে এলাকায় শুরু করেন আধিপত্য বিস্তার। তার ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে দুর্র্ধষ বাহিনী। কতিপয় সাংবাদিকদের দিতেন নিয়মিত মাসোহারা। যারা এখনো ফেসবুকে গুণকীর্তন করতে ব্যস্ত। তারা  এলাকাবাসীর কাছে তাজ বাহিনী হিসেবে পরিচিত। এই বাহিনীর মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রণে রাখেন পুরো ইউনিয়নের আধিপত্য। এসব কর্মকাণ্ডের সম্মুখে এলাকা ছাড়া থাকেন আক্তার চেয়ারম্যান সহ বহু বিএনপি, জামাতের নেতাকর্মী। আজ শুক্রবার মুঠোফোনে আক্তার চেয়ারম্যান জানান, আমাকে প্রকাশ্যে শিচু সন্তানের সামনে যেভাবে পিটিয়েছিলো, তা মনে করলে এখনো ঘুমুতে পারিনা। সরেজমিনে (৮ জানুয়ারি)  গিয়ে দেখা যায়, দরিদ্র কৃষক মৃত সুলতান মিয়ার ছেলে  বুধাইরকান্দি  গ্রামে নির্মাণ করছেন বিলাসবহুল বহুতল ডুপ্লেক্স বাড়ি। নান্দনিক নকশা ও কারুকার্যে বাড়িটি নজর কাড়বে যে কারও। বাড়ির পাশেই কয়েক একর সরকারী খাস জমি দখল করে বালু ভরাট করছেন তাজ।অবৈধভাবে  বালু ভরাট করে বিভিন্ন সরকারী খাস সম্পত্তি ও আশেপাশের কৃষি জমি দখলের পায়তারা করেছেন এই প্রভাবশালী নেতা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে কমিশন বাণিজ্যের। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ ইউনিয়নে যে কোন কাজের জন্য তাজকে দিতে হয় মোটা অংকের কমিশন। কমিশন না দিলে রাস্তা কিংবা প্রকল্পের নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয় তাজের লোকজন। সরকারী রাস্তা নির্মানের জন্য আনা ইট বালু সিমেন্টের দোকান থেকে নিতে হতো। জমি ক্রয়-বিক্রয় করতে গুনতে হয় কমিশন। বাড়ি নির্মাণ কিংবা বড় পরিসরে ব্যবসা করতে হলেই দিতে হয় চাঁদা। উজানচর ইউনিয়নে ভেকু দিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে নেয় তাজের লোকজন। বারবার এ বিষয়ে প্রতিবাদ করেও কোন প্রতিকার মিলছে না স্থানীয় কৃষকসহ ভুক্তভোগী জমির মালিকদের। পার্শ্ববর্তী ইটভাটায় এসব মাটি বিক্রির ব্যবসা লাভজনক হওয়ায় ছোট তাজের ছাত্রছায়ায় সক্রিয় বেশ কয়টি চক্র নিয়মিত মাটি কেটে নিচ্ছে ফসলি জমি থেকে। এতে স্থায়ীভাবে নষ্ট হচ্ছে বিস্তীর্ণ ফসলের জমি। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে  অভিযুক্ত ছোট তাজ মেসেঞ্জারে বলেন, ‘এসব অভিযোগ সত্য না। অবৈধ অর্থ আমি ইনকাম করি নাই।আমার পিতা ছিলো জমিদার।আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে।আমার বিরুদ্ধে লিখলে আমারও নিজস্ব সাংবাদিক আছে।নেপালে কনো পালিয়ে আছেন প্রশ্নের জবাবে বলেন, সময় মতো জবাব দিব।"

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে