ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে বিগত এক বছরে তামাক চাষের লক্ষামাত্রা চার গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাক চাষের নিরৎসাহিত করতে কৃষি অফিসের পরামর্শ প্রদান করলে ও কৃষকরা যেন মানতে নারাজ। যেহেতু তামাক চাষ করে তারা অধিক লাভবান হচ্ছে এ কারনে তারা কৃষি াফিসের কোন কথাই মানছে না। বিশেষ করে বিভিন্ন তামাক কোম্পানি কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের নানা ভাবে উৎসাহিত করে তামাক চাষ করিয়ে থাকে। কালীগঞ্জে কৃষক নান্নু মীরের শরীরে মরণঘাতী ব্যাধি ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছে অনেক আগেই। পরিবারে রয়েছে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় দুই ছেলে, এক মেয়ে। স্ত্রী নিয়ে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারি ব্যক্তি নান্নু মীর। কৃষি কাজ করে তার কোন রকম জীবন চললেও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। বিগত কয়েক বছর তিনি নিজ জমিতে সবজি চাষ করে তেমন একটা লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছিল না। যে কারণে তার নিকটতম আত্নীয় সজদের নিষে করা সত্বেও এ বছর তিনি সবজি চাষ তুলে দিয়ে ৬ বিঘা জমিতে তামাক চাষ শুরু করেছেন। পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও মাটির গুনাগুনের মারাত্মক ক্ষতির বিষয়টি জেনেও তিনি সংসার চালাতে অনেকটা বাধ্য হয়েই তামাক চাষ করেছেন। নান্নু মীরের লাগানো ৬ বিঘা জমিতে তামাক গাছের সংখ্যা প্রায় ১৫ হাজার। গত বছর অক্টোবর মাসে জমিতে তামাকের চারা রোপণ করেছিলেন তিনি। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলবে তামাকের পাতা সংগ্রহ এবং তাপ দিয়ে শুকানোর কাজ। এরপর শুকানো তামাক পাতা কোম্পানি কর্তৃক নির্ধারিত ২২৬ থেকে ২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করবেন। তামাক চাষের তামাক পাতা শুকানোর ঘর নির্ণান, এসওপি সার এবং চাষের অন্যান্য খরচ বাবদ আর্থিক সার্বিক সহযোগিতা করেছে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো বাংলাদেশ" নামের একটি কোম্পানি। উক্ত কোম্পানির মাঠ কর্মী সার্বক্ষণিক তাদের চাষাবাদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে থাকেন। জমি থেকে উৎপাদিত তামাক তিনি ওই কোম্পানির নিকটই বিক্রি করবেন। ৬ বিঘা জমিতে তামাক চাষে ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা ব্যায় হলেও উৎপাদিত তামাক বিক্রি হবে আনুমানিক ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকা। মূলত তামাক উৎপাদনের আগে কোম্পানি গুলোর দর নির্ধারণ,বিক্রির নিশ্চয়তা,চাষের জন্য সুদ মুক্ত ঋণ,কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও পরামর্শদানের সুবিধার কারণেই কালীগঞ্জ উপজেলার পাঁচকাহুনিয়া গ্রামের নুর ইসলামের ছেলে কৃষক নান্নু মীর তামাক চাষ শুরু করেছেন। নান্নু মীরের মানবদেহে ক্যান্সার রোগের নিরাময় এই তামাক পাতা জেনেও আর্থিক লাভের কারণে একই গ্রামের নিতাই পদ সরকারের ছেলে কৃষক অসীম কুমার সরকার ৮ বিঘা,রঞ্জন কুমার রায়ের দুই ছেলে প্রশান্ত কুমার রায় ৫ বিঘা ও উত্তম কুমার রায় ৫ বিঘা, বাবর আলী ছেলে জাকির হোসেন ৪ বিঘা পার্শ্ববর্তী গ্রামের পারখিদ্দা গ্রামের হুজুর আলী ছেলে সোহাগ হোসেন ১৮ বিঘা তামাক চাষ করেছেন। তামাকের গাছ থেকে পাতা সংগ্রহের সময় সন্নিকটে হওয়ায় তামাক চাষিরা এখন নিজ নিজ বাড়িতে তামাকের পাতা তাপের মাধ্যমে শুকানোর ঘর নির্মাণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চলতি বছর কালীগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট, পাচকাহুনিয়া এবং পারখিদ্দা গ্রামের মাঠে ১০ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ হচ্ছে। বিগত বছর এই গ্রামের মাঠ গুলোতে মাত্র ২ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ ছিল। ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকো কোম্পানির মাঠ কর্মী শিপন হোসেন বলেন,কালীগঞ্জ উপজেলায় ২৫ জন চাষী এবার তামাক চাষ করছেন। কোম্পানির পক্ষ থেকে আমি এইসব কৃষকদের তামাক চাষে নিয়মিত খোঁজ খবর নিচ্ছি ও সহযোগিতা করছি।গত বছরের থেকে এ বছর তামাক চাষ বেড়েছে বলেও তিনি যোগ করেন । কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব আলম রনি বলেন,তামাক চাষে কৃষকদের আমরা বরাবরই নিরুৎসাহিত করে আসছি। তামাক চাষের ক্ষতিকর দিক গুলো আমরা মাঠ দিবস এবং বিভিন্ন সভা সেমিনারে কৃষকদের মাঝে বিস্তারিত বলে থাকি। কৃষকদেরকে পরামর্শ দিচ্ছি তামাক চাষের পরিবর্তে উচ্চমূল্যের ফসল চাষাবাদের জন্য। ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলায় কম-বেশি তামাক চাষ হলেও হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা, সদর ও মহেশপুরে বেশিচাষ হয়।ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ বলছে, ব্রিটিশ -অ্যামেরিকান টোব্যাকো, জাপান টোব্যাকো ইন্টারন্যাশনালসহ অন্যান্য তামাক বাজারজাতকারী কোম্পানি গুলো চাষিদের চাষিদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। তারা তামাকের চারা রোপণ থেকে শুরু করে সার-কীটনাশক কেনার জন্য কৃষকদের অগ্রিম টাকা প্রদান করে ও উৎপাদিত তামাক কেনার নিশ্চয়তা দেয়। এই কারণে খাদ্য জাতীয় ফসল বাদ দিয়ে এই অঞ্চলের কৃষকরা তামাক চাষের দিকে ঝুকছে। ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ১৬০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়। পরের বছর ২০২২-২৩ অর্থবছরে ২৫১ হেক্টর জমিতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৯৩ হেক্টর ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২২৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলার মহেশপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ৮৪ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছর পর্যন্ত হরিণাকুন্ডু উপজেলাতে ১২৪ হেক্টর, এবছর সর্বচ্চো ১৫৫ হেক্টর জমিতে তামাকের চাষ করা হয়েছে।