হিলি স্থলবন্দরে ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা

এফএনএস (মোস্তাফিজার রহমান মিলন; হিলি, দিনাজপুর) : | প্রকাশ: ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ০৬:৪১ পিএম
হিলি স্থলবন্দরে ৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাস (জুলাই-ডিসেম্বর) হিলি স্থলবন্দরে  রাজস্ব আদায়ে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৩৬২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আদায় হয়েছে ৩১৮ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) হিলি স্থলবন্দর থেকে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছে ৭৪০ কোটি টাকা। সেই অনুযায়ী অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা; বিপরীতে আহরণ হয়েছে ৪৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৫৫ কোটি আট লাখ টাকা। অক্টোবরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা; বিপরীতে আদায় হয়েছে ৭৪ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। নভেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৫ কোটি ১৯ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৪৩ কোটি ৯২ লাখ টাকা। ডিসেম্বরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৯ কোটি ২১ লাখ টাকা; বিপরীতে এসেছে ৫৩ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। বন্দরের আমদানিকারক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রাজস্ব ঘাটতির মূল কারণ হলো এই বন্দর দিয়ে যেসব পণ্য আমদানি হয়; যেমন চাল-ডাল, খৈল, ভুসি, ভুট্টা ও পেঁয়াজসহ অধিকাংশই শুল্কমুক্ত। সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় চাল। এতে যে শুল্ক ছিল সরকার সেটি প্রত্যাহার করেছে। এ কারণে রাজস্ব আহরণে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হচ্ছে না। আরেকটি কারণ হলো আগে প্রচুর পরিমাণ ফল আমদানি হতো। কিন্তু সরকার ট্রাকের চাকা অনুযায়ী শুল্কায়নের প্রথা চালু রাখায় ফল আমদানি বন্ধ আছে। এটি যদি উন্মুক্ত করে দিতো অর্থাৎ যে যতটুকু পণ্য আমদানি করবে, সেই পরিমাণ পণ্যের শুল্ক দেবে তাহলে প্রচুর পরিমাণ ফল আমদানি হতো। সেইসঙ্গে রাজস্ব আরও বাড়তো। পাশাপাশি অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানির ক্ষেত্রেও এখানে বৈষম্য আছে। বেনাপোলে যে পণ্য সাড়ে তিন ডলারে শুল্কায়ন করা হচ্ছে, একই পণ্য হিলি বন্দরে পাঁচ ডলারে শুল্কায়ন করা হয়। ফলে আমদানিকারকরা এই বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বন্ধ করে দিয়েছেন। এসব জটিলতা কাটলে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি বাড়বে, সেইসঙ্গে রাজস্ব আরও বাড়বে।

হিলি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর ইসলাম বলেন, ‘কেন জানি মনে হচ্ছে ধীরে ধীরে বন্দরটিকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে কেউ। দিনে দিনে আমদানি কমে যাচ্ছে। বন্দরের রাস্তাঘাটগুলো ভাঙাচোরা, ব্যাংকগুলো চাহিদামতো এলসি খুলতে দেয় না। সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হলো কাস্টমসের। সব বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কায়ন হবে একই নিয়মে। হিলি বন্দরও একইভাবে চলবে কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন হয় না। অধিক শুল্কযুক্ত কোনও পণ্য আমদানি হলে কাস্টমস নানাভাবে হয়রানি করে। এই এইচএস কোড চলবে না, এই শুল্ক চলবে না, বাড়তি শুল্ক দিতে হবে। একই পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বারবার কেমিক্যাল কিংবা বিএসটিআই টেস্টে পাঠানোর নামে হয়রানি করা হয়। এসব কারণে অনেকে পণ্য আমদানি করতে চায় না।

হিলি কাস্টমস সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘যেসব পণ্যের ওপরে রাজস্ব বেশি সেগুলো হিলি দিয়ে আমদানি হয় না। কারণ কাস্টমস কর্তৃপক্ষ এইচএস কোড ও শুল্ক নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে। ফলে ওসব পণ্য বেনাপোল দিয়ে আমদানি হয়। ফলে সরকারের রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা সেটিতে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। আমার মনে হয় হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনকে কাস্টমস হাউজ বানিয়ে কাস্টমস কর্মকর্তারা শুল্ক আদায়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত দিতে পারলে বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি যেমন বাড়বে তেমনি ব্যবসায় গতি আসবে। সেইসঙ্গে রাজস্ব আদায়ও বেড়ে যাবে।’ হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা শফিউল ইসলাম বলেন, ‘অর্থবছরের গত ছয় মাসে হিলি বন্দরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকা কম রাজস্ব এসেছে। এর কারণ হলো বর্তমান সরকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পণ্যের আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছে। বিশেষ করে চাল, পেঁয়াজ, আলু ও মরিচের ওপর থেকে শুল্ক তুলে দেয়। বন্দর দিয়ে অধিক শুল্কযুক্ত পণ্য আমদানি হয় শুধুমাত্র জিরা ও কিসমিস। এই থেকে বেশি রাজস্ব আসে। আমদানি বেড়েছে। তবে শুল্ক তুলে দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। বর্তমানে যেভাবে আমদানি-রফতানি চলছে অর্থবছরের আগামী ছয় মাস এমন অবস্থা থাকলে আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।’

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে