অ্যান্টিবায়োটিক শব্দটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। জীবনে একবারও অ্যান্টিবায়োটিক খায়নি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন হবে। কারণে-অকারণে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক খাচ্ছি। কখনো ডাক্তারের পরামর্শে, আবার কখনো নিজের বুদ্ধিতে। কারো অসুখবিসুখে একটি শব্দ সবার কাছে শোনা যায়। সেই শব্দটি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। সামান্য জ্বর সর্দি কাশি হলেই আশপাশের ফার্মেসি থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। তবে আমরা কখনো চিন্তা করি না সামান্য অসুস্থতা বোধ করলেই যে অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ সেবন করা কতটা স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ? আমরা অনেকে মনে করি অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়, অসুস্থতা যতই সামান্য হউক বা জটিল। বিশ্বের অন্যান্য দেশে রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনোভাবে অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করার সুযোগ নেই। অথচ বাংলাদেশের ফার্মেসিগুলোতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ। আইন থাকলেও দৃশ্যমান প্রয়োগ নেই। এমবিবিএস ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ফার্মেসি দোকানদারের পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খাওয়ার ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে অসচেতন ও স্বল্প আয়ের মানুষগুলো। এছাড়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অনেকে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করে থাকে। তবে অনেকেই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা শুরু করলেও মাঝপথে গিয়ে খাওয়া বন্ধ করে দেয় বা ওষুধের কোর্স সম্পন্ন করে না। আর এভাবেই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হয়ে পড়ে বা তার কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য প্রায়ই সবার মুখে শোনা যায়, এখন অ্যান্টিবায়োটিকেও কাজ করছে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মাত্রা অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক সেবন এবং সঠিক নিময়ে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন না করায় দিন দিন বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি। বিদেশে ডাক্তারগণ খুব জরুরি না হলে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করেন না। সার্জারির পরও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দিতে চান না অ্যান্টিবায়োটিক। আমাদের দেশের ডাক্তাররাও ওষুধটির যথেচ্ছ ব্যবহার করছেন। একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার কারণেও এই দেশে ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছেন। কয়েক ধরনের জৈব-রাসায়নিক ওষুধ যা অণুজীবদের (বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া) নাশ এবং বা বৃদ্ধি রোধ করে তাকেই অ্যান্টিবায়োটিক বলা হয়। সাধারণত এই ওষুধ ব্যাকটেরিয়া এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফাঙ্গাসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। ভাইরাসের বিরুদ্ধে ওষুধটি কোন কাজ করে না। ভাইরাসজনিত রোগের কারণে কোনো ব্যাকটেরিয়া ইনফেকশন হলেই কেবল অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করতে হয়। এক্ষেত্রে চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকেন। একেক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক একেক ধরনের অণুজীবের বিরুদ্ধে কাজ করে থাকে। ভাইরাস জ্বরে যারা অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করছেন, তারা প্রকারান্তরে নিজের ক্ষতি ছাড়া লাভবান হচ্ছেন না কিছুতেই। অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে জনগণকে সচেতন করা দরকার। ডাক্তারের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র ছাড়া যাতে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক ফার্মেসিতে বিক্রি করতে না পারে সে জন্য আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।