বাংলাদেশের সেবা খাত থেকে সেবা নিতে গিয়ে ৭০.৯ শতাংশ এরও বেশি পরিবার দুর্নীতির শিকার হয়েছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)-এর “সেবা খাতের দুর্নীতি: জাতীয় গৃহস্থালি জরিপ ২০২৩”-এ উঠে এসেছে। ১৭ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) টিআইবির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। জরিপে দেখা গেছে, পাসপোর্ট সেবা সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত খাত হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যেখানে ৮৬% পরিবার পাসপোর্ট পরিষেবা গ্রহণের সময় দুর্নীতির শিকার হয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) থেকে সেবা নিতে গিয়ে ৮৫.২ শতাংশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগে ৭৪.৫ শতাংশ এবং বিচার বিভাগের সেবা নিতে গিয়ে ৬২.৩ শতাংশ পরিবার দুর্নীতির সম্মুখীন হয়েছে। ১৫ হাজার ৫১৫টি পরিবারের ওপর জরিপটি পরিচালিত হয়, যেখানে উত্তরদাতাদের ৫১.৪ শতাংশ পুরুষ, ৪৮.৫ শতাংশ নারী এবং ০.১ শতাংশ তৃতীয় লিঙ্গের। জরিপে দেখা গেছে, পরিবারের প্রধানদের মধ্যে ২৩.৪ শতাংশ কৃষি বা মৎস্য চাষে নিয়োজিত ছিলেন। জরিপে আরও উঠে এসেছে যে, সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে পাসপোর্ট সেবার জন্য, যেখানে প্রায় ৭৪.৮ শতাংশ পরিবার এই সেবা গ্রহণ করতে গিয়ে ঘুষ দিয়েছে। সকল সেবা খাতে গড় ঘুষের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৬৮০ টাকা। তবে বিচার বিভাগীয় সেবার জন্য সবচেয়ে বেশি গড় ঘুষ দিতে হয়েছে, যার পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৯৭২ টাকা। বরিশাল বিভাগ দুর্নীতি ও ঘুষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে, যেখানে ৮২ শতাংশ পরিবার দুর্নীতির শিকার এবং ৬১.৯ শতাংশ ঘুষ দেওয়ার কথা জানিয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, ২০২৩ সালে সেবা খাতে দেশের মোট আনুমানিক ঘুষের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৯০২.৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে ভূমি খাতের অংশ ছিল সর্বোচ্চ, প্রায় ২ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত সেবা খাতে দেশের মোট আনুমানিক ঘুষের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ন্যূনতম ১ লাখ ৪৬ হাজার ২৫২ কোটি টাকা। টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “এই জরিপের ফলাফল বাংলাদেশের সেবা খাতগুলোর গভীরভাবে প্রোথিত দুর্নীতির একটি স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরে।” তিনি উল্লেখ করেন, ঘুষ ও দুর্নীতিপ্রবণ আচরণ কীভাবে জনগণের প্রয়োজনীয় সরকারি ও বেসরকারি সেবাগুলোতে অনুপ্রবেশ করেছে। টিআইবির প্রধান বলেন, এই জরিপ কেবল নাগরিকদের সেবা গ্রহণে যে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছে তা-ই তুলে ধরছে না, বরং সরকারি এবং কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাগত সমস্যা প্রকাশ করছে, যা জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন করছে এবং দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করছে।