নাগরিক সেবায় ভোগান্তির শেষ নেই!

সম্পাদকীয় : | প্রকাশ: ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ০৮:৫৫ পিএম
নাগরিক সেবায় ভোগান্তির শেষ নেই!

গত জুলাই-আগস্টের অভ্যুত্থানের সরকার পতনকে কেন্দ্র করে দেশে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষণীয় ছিল। বিশেষ করে পদত্যাগের হিড়িক গড়ে উঠেছিল। এছাড়াও বিগত ১৬বছর আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় থাকাতে ওই দলের লোকবল ছিল সর্বক্ষেত্রেই। তবে এই সংগঠনের লোকবল আর চাচ্ছে না বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা। তাই পর্যায়ক্রমে সারাদেশে উচ্চপদস্থ থেকে শুরু করে নিম্ন পদস্থ পর্যন্ত সকলকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। আর এতেই নাগরিক সেবায় ব্যাপক ধাক্কা খায়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ঢাকার উভয় সিটি করপোরেশনের করুণ চিত্র উঠে আসে। খবর অনুযায়ী, জন্মনিবন্ধন, ওয়ারিশান সনদ, বয়স্ক ও বিধবা ভাতার প্রত্যয়নপত্রের ন্যায় প্রয়োজনীয় নথিপত্র সংগ্রহে নগরবাসীর ভোগান্তি বাড়িয়াছে।

কাউন্সিলরের অনুপস্থিতিতে সরকার আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে সত্য, তারা হিমশিম খাচ্ছে। একেকজন নির্বাহী কর্মকর্তাকে দৈনন্দিন দায়িত্বের পাশাপাশি ৯টি সাধারণ ও তিনটি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাগজপত্রে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে। এতে সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াতে সৃষ্টি হচ্ছে নতুন জটিলতা। পূর্বে স্থানীয় প্রতিনিধির পক্ষে আবেদনকারীকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সেবা দিতে অসুবিধা হত না। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা না হওয়ার কারণে আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না। যার ফলে সেবা প্রদানে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ করতে হচ্ছে। পূর্বে যেখানে পাঁচ মিনিটে নাগরিক সনদ প্রদান করা যেত, সেখানে বর্তমানে পাঁচ দিন সময় লাগছে। শুধু তাই নয়, একই সঙ্গে মশককর্মীরা নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করছে না বলেও বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে ডেঙ্গুজ্বরবাহী এডিস মশা নিধনে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

এতে ডেঙ্গুজ্বরের প্রাদুর্ভাব মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় বাসাবাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহে গাফিলতি দেখা যায়। অনেক এলাকায় দুই থেকে তিন দিন ময়লা না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, রামপুরা, বনশ্রী, খিলগাঁও, ডেমরাসহ কয়েকটি এলাকা থেকে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া সরকার পরিবর্তনের পর ময়লা সংগ্রহে ভ্যান সার্ভিসগুলো দখলের অভিযোগ রয়েছে। সিটি করপোরেশনগুলোতে পূর্বের পরিষদ বাতিলের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বাস্তবতা অস্বীকার করা যাবে না। কিন্তু পর্যাপ্ত বিকল্প ব্যবস্থা ব্যতীত এইরূপ পরিস্থিতি যে হিতে বিপরীত হতে পারে, তাও বিবেচ্য হতে পারত। নাগরিক সেবা শুধু ঢাকায় ব্যাহত হচ্ছে, ব্যাপারটা এমন নয়। সারাদেশের মানুষ এই ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন। তাই এই বিষয়ে এখনি সরকারের ভাবা উচিত বলে আমরা মনে করছি। এক্ষেত্রে বর্তমান প্রেক্ষাপট অনুযায়ী যেসকল জায়গায় নাগরিকরা সঠিক সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সেসব জায়গায় জনবল বাড়ানো দরকার।

0 LIKE
0 LOVE
0 LOL
0 SAD
0 ANGRY
0 WOW